লাশ নয় জীবিতই পাওয়া গেল সেই মাদ্রাসাছাত্রকে

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি |

লাশ উদ্ধার নয় বরং জীবিত অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়েছে কথিত হত্যাকাণ্ডের স্বীকার ভৈরবের মাদরাসাছাত্র জাসিমুর রহমান জাসিম (১৩)কে। শনিবার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুবপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

গতকাল সকালে তাকে ভৈরব থানায় নিয়ে আসার পর দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুন নূর ২২ ধারায় শিশুটির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর ভৈরব থানা পুলিশের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২১শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার মসজিদের ইমাম মো. খোরশেদ আলম মুছা (৩৮) তার চট্টগ্রামের বাসায় মাদরাসাছাত্র জাসিমকে কয়েকবার বলাৎকার করার চেষ্টা করেন।

একপর্যায়ে বলাৎকার করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাকে গলাটিপে হত্যা করেন ইমাম মুছা। পরে ওইদিন বিকাল ৪টার দিকে জাসিমের লাশ বস্তাবন্দি করে ব্রিজ থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীতে ফেলে দেয়া হয়। আদালতেও এমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ইমাম মো. খোরশেদ আলম মুছা। এদিকে কথিত হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের খবরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মাদরাসাছাত্র জাসিমুর রহমান জাসিম ভৈরবের আকবরনগর এলাকার এরফানুল রহমানের ছেলে এবং ভৈরবের কমলপুর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।

সূত্র জানায়, জাসিমুর রহমান জাসিম গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বিকেলে তার ভৈরবের বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। এদিন সে বাসা থেকে মাদরাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়। কিন্তু সে মাদরাসায় যায়নি। তিনদিন খোঁজাখুঁজির পর গত ২০শে সেপ্টেম্বর তার বাবা এরফানুল রহমান ভৈরব থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর গত ২১শে সেপ্টেম্বর অপরিচিতি একটি মোবাইল নম্বর থেকে জাসিমের বড় ভাই নাইমুলের কাছে একটি কল আসে। এই ফোন কলে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বলা হয়, টাকা না দিলে জাসিমকে হত্যা করা হবে। পরে বিকাশে কিছু টাকাও দেয়া হয়। কিন্তু টাকা দেয়ার পরও ওই ছাত্রের কোনো সন্ধান দেয়নি তারা।

উপায় না পেয়ে ছাত্রের বাবা ভৈরব থানায় গত ২৯শে সেপ্টেম্বর একটি অপহরণ মামলা করেন। মামলার পর পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়। মুক্তিপণ দাবি করা অপরিচিত ওই মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে পুলিশ। পরে প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মোতাছিম বিল্লাহ সাকিব (১৭) নামে যাত্রাবাড়ী তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মোতাছিম বিল্লাহ সাকিব জানায়, তার বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা গ্রামে। তার বাবার নাম মাহমাদুল হাসান শাকিল। অপহৃত মাদরাসাছাত্র চট্টগ্রামের এক ইমামের কাছে আছে বলেও সে জানায়।

পরে সাকিবের দেয়া তথ্য অনুসারে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ইমাম মো. খোরশেদ আলম মুছাকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভৈরব থানার এসআই মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, দুই আসামির স্বীকারোক্তি দেয়ার পর থেকে পুলিশ ও মাদরাসাছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে জাসিমের লাশ উদ্ধারের জন্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করা হচ্ছিল। এ অবস্থায় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুবপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জাসিমকে তার স্বজনেরা দেখতে পেয়ে তাকে বিষয়টি জানায়। শনিবার তিনি সেখানে গিয়ে জাসিমকে উদ্ধার করে রোববার ভোরে ভৈরব নিয়ে আসেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.015742063522339