লেকচার অনুপম চ্যান্সেলরের নোট-গাইডে বাজার সয়লাব

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে শিক্ষাকে আনন্দময় করতে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা প্রণয়ন করেছে সরকার। এ রূপরেখা অনুযায়ী চলতি বছরে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পাঠদান। বলা হয়েছিল, নতুন কারিকুলামে শ্রেণিকক্ষে বুঝে শিখবে ছাত্রছাত্রীরা, সৃজনশীল হয়ে উঠবে তারা। কিন্তু এই নতুন কারিকুলামেও নিষিদ্ধ নোট-গাইড বাণিজ্য শুরু করেছে শিক্ষা ব্যবসায়ীরা। বাজারে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে সব শ্রেণির জন্যই মিলছে এসব নোট-গাইড। অভিযোগ রয়েছে, নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের কাছে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অনেক শিক্ষক ছাত্রছাত্রীকে বাধ্য করছেন এসব নোট-গাইড কিনতে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, নোট-গাইড পড়ে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলতা শিখতে পারছে না। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ২৬ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আক্তারুজ্জামান। 

প্রতিবেদনের বিস্তারিত: নতুন কারিকুলামে কমানো হয়েছে পরীক্ষানির্ভরতা। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেওয়া যাবে না। ফলে শিক্ষা পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা নোট-গাইড নির্ভরতা কমবে বলে প্রত্যাশা করেছিল অনেকে। কিন্তু নতুন বছরে পাঠদান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিষিদ্ধ নোট-গাইডে সয়লাব হয়েছে দেশ। এর প্রভাব পড়েছে দেশের স্কুলে স্কুলে। নোট-গাইড প্রকাশনীর মালিকরা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের ‘হাত করে’ ছাত্রছাত্রীদের এসব নোট-গাইড কিনতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাবাজারের বইয়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রতিটি শ্রেণির জন্য পাওয়া যাচ্ছে নোট-গাইড। নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্যও বাজারে এসেছে বাহারি বিভিন্ন নোট-গাইড। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাঞ্জেরী, লেকচার/নিউটন, অনুপম, চ্যান্সেলর, সংসদ, আদিল, ফুলকুঁড়ি প্লাস, ইন্টারনেট, অ্যাকটিভ চমক, গ্লোবাল, দিগন্ত, ক্লাসফ্রেন্ড, ক্যাপ্টেনসহ বিভিন্ন প্রকাশনী এসব নোট-গাইড বাজারে এনেছে। লাইব্রেরির বাইরে ফুটপাতেও পসরা সাজিয়ে বিক্রি চলছে এসব নোট-গাইড। রাজধানীর বাংলাবাজারে আনিস বুক ডিপো, রাজধানীর বুক হাউস, হক লাইব্রেরি, রবিন বুক ডিপো, সাঈদ বুক ডিপো, শাহাবুদ্দিন বুক ডিপো, ঢাকা টাউন লাইব্রেরি, রাখি বুক সেন্টার, এস কে বুক হাউস, নিউ বুকস অ্যান্ড স্টেশনারিতে গিয়ে এসব নোট-গাইড বিক্রি হতে দেখা গেছে। শুধু বাংলাবাজার নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় লাইব্রেরিগুলোয় এ নোট-গাইড বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, এগুলো নোট-গাইড নয়, সহায়ক বই।

শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনেই এ বইগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরে এসব সহায়ক বইয়ের অপেক্ষায় ছিলেন। যাদের এসব বই প্রয়োজন নেই তারা এগুলো কিনবে না বলে মত দেন তিনি। শ্যামল পাল বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব বই কিনতে আমরা কোনো শিক্ষককে চাপ দিতে বলিনি। নিজেদের প্রয়োজনেই ছাত্রছাত্রীরা এসব বই কিনছে বলে দাবি করেন তিনি। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল বইয়ের বাইরে কোনো নোট-গাইড বা সহায়ক বই পড়ার প্রয়োজন নেই। আর নতুন কারিকুলাম তো করাই হয়েছে শিক্ষাকে আনন্দময় করার জন্য। এর পরও যারা এসব নিষিদ্ধ বই প্রকাশ করছেন, যারা নোট-গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন তারা গর্হিত কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা শিক্ষা আইন না হওয়ার কারণে গাইড বাণিজ্যের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অভিমত অনেকের। আর শিক্ষা আইন না হওয়ার পেছনে নোট-গাইড প্রকাশক মালিকরাও কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব মোসা. নাজমা আখতার গতকাল বলেন, নোট-গাইড অনেক আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এসব বই বিক্রি, বাজারজাত করার সুযোগ নেই। এসব নিষিদ্ধ বই বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে বা কেউ এমন অভিযোগ দিলে অবশ্যই সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একটি সূত্র প্রতিবেদককে জানান, শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নোট-গাইড না কেনার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করবে এনসিটিবি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের নিয়ে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে নোট-গাইডের ব্যবসা বন্ধ হবে, এজন্য তাদের কেউ কেউ নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করছেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু সব লক্ষ রাখছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028679370880127