আজ ১৪ মে (রোববার) কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীকে এ নন্দিত কথাশিল্পীর স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। রোববার বিকেলে জাতীয় জাদুঘর শাহবাগের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ মহান কথাশিল্পীর স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর ছেলে ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সভার সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক কালবেলার প্রধান সম্পাদক আবেদ খান।
ব্যাংক কর্মকর্তা মেরিন নাজনিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভার শুরুতে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জীবনভিত্তিক এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বাবার স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, আমার বাবা ছিলেন আজীবন শোষকের বিরুদ্ধে। তাঁর লেখনীর মাধ্যমে তিনি পাকিস্তান আমলে শোষিতের কথা বলেছেন। ‘ক্রীতদাসের হাসি’ সর্বকালের স্বৈরশাষকের বিরুদ্ধে গণজাগরণের দিশারী। এ উপন্যাসে রূপকের মাধ্যমে তিনি বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, কথাশিল্পী শওকত ওসমান এ সমাজে ধর্মীয় কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন। তিনি এক ছড়ায় বলেছেন, এ দেশে মানুষ হওয়ার আগে, হিন্দু বা মুসলমান হওয়া লাগে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর কথাশিল্পী শওকত ওসমান একমাত্র যিনি এই হত্যার প্রতিবাদে দেশ ত্যাগ করে ভারত গিয়েছিলেন। কথাশিল্পী শওকত ওসমানের মতো মানুষ আর জন্মাবে বলে মনে হয় না।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী তার বক্তব্যে ১৯৪৭ এর দেশ-বিভাগের পর কথাশিল্পী শওকত ওসমানের চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে অধ্যাপনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাহিত্য সাধনা ছাড়াও কথাশিল্পী শওকত ওসমান একজন বিবেকবান মুক্তবুদ্ধির ব্যক্তিত্ব হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। আমার বাবা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও কথাশিল্পী শওকত ওসমানের সান্নিধ্য লাভ করেছেন।
কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. দিপু সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি কথাশিল্পী শওকত ওসমানের নামে একটি রাস্তার নামকরণের প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও দৈনিক কালবেলার প্রধান সম্পাদক আবেদ খান বলেন, আমি ভাবতে পারি না, এই মানুষটি (কথাশিল্পী শওকত ওসমান) আর আমাদের মাঝে নেই। দেশে তখনও গ্যাসের চুলার কানেকশন দেয়া শুরু হয়নি। তিতাস গ্যাস কোম্পানি তখন সারা দেশ খুঁজে একজন আদর্শ, সৎ নিষ্ঠাবান মানুষ কথাশিল্পী শওকত ওসমানের বাসায় প্রথম গ্যাসের চুলার সংযোগ দেন। পূর্ব-পাকিস্তানে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের রান্নাঘর থেকেই প্রথম গৃহস্থালি কাজে গ্যাস ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। এই ছোট একটি ঘটনা থেকেই পরিমাপ করা যায় যে কথাশিল্পী শওকত ওসমান কত বড় মাপের একজন মানুষ ছিলেন। এই সব জ্ঞানী ব্যক্তিত্বদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, কথাশিল্পী শওকত ওসমান ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।