ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। এরমাঝে গত বৃহস্পতিবার দেশের সিলেট অঞ্চল মৃদুমাত্রায় কেঁপেছে। ভারতের মেঘালয়ে উৎপত্তি হওয়া এই ভূমিকম্পে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই মেঘালয় অঞ্চলে এমন স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প প্রায়ই ঘটছে। সর্বশেষ একশ’ বছর আগে এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প হয়েছে।
ভূমিকম্পের ইতিহাস ঘাটলে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু শক্তিশালী ভূমিকম্পের তথ্য পাওয়া যায়। যদিও এসব ভূমিকম্পের বিস্তারিত বর্ণনা তেমন একটা নেই। ভূমিকম্পগুলোর সঠিক মাত্রাও সঠিকভাবে জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য কম থাকলেও অতীতে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পগুলোর কারণে দেশের ভূ-প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। দেশের নদীগুলোর গতিপথ পাল্টেছে। এসব ভূমিকম্পগুলোই বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আগাম ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করেন ভূতত্ত্ববিদরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরির সাবেক পরিচালক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘যেখানে অতীতে ভূমিকম্প হয়েছে, সেখানে ভবিষ্যতে ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ হিসাবে বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সিলেট থেকে কক্সবাজারের যে পাহাড়ি অঞ্চল রয়েছে সেখানে বহু বছর ধরে ভূমিকম্প হয়নি। সেখানে বছরের পর বছর ধরে শক্তি জমা হচ্ছে। এই শক্তি বের হলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। যেটি যেকোন সময়ই ঘটতে পারে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁঞার আশঙ্কাও একই রকম। তিনি বলেন, ‘যেখানে একবার ভূমিকম্প হয় সেখানে আবার ভূমিকম্প হবে এটা নিশ্চিত। আমাদের এই অঞ্চলে যেহেতু অতীতে বড় ভূমিকম্প হওয়ার তথ্য রয়েছে সেহেতু ভবিষ্যতেও বড় ভূমিকম্প অপেক্ষা করছে। তবে সেটি কবে হবে তা বলা কঠিন। তাছাড়া ভূমিকম্প কেমন মাত্রায় হবে কতটা প্রভাব পড়বে সেটিও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।’
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, বাংলাদেশ তিনটা প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। উত্তরে তিব্বত সাব-প্লেট, পূবে বার্মা সাব-প্লেট এবং পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট রয়েছে। ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের মধ্যে সংযোগস্থল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এটা সুনামগঞ্জ কিশোরগঞ্জ হাওর হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। যা আন্দামান হয়ে দক্ষিণ সুমাত্রা পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
এরমধ্যে বাংলাদেশের জন্য ভূমিকম্পের উৎস দুটি। একটি হলো মেঘালয়ের ডাউকি প্লেটের পূর্বপ্রান্তে সুনামগঞ্জ থেকে জাফলং পর্যন্ত। আরেকটি হলো সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যে পাহাড়ি অঞ্চল রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট থেকে কক্সবাজারের অংশটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘সিলেট থেকে কক্সবাজার অংশটিতে ইন্ডিয়ান প্লেট নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর বার্মা প্লেট ওপরে পশ্চিমের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমন অঞ্চল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে যেখানে ৮ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয়। আমাদেরটাও তার ব্যতিক্রম নয়।’আর আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা বলছেন, ‘পাঁচ বিলিয়ন (পাঁচশ’) বছর ধরে নানা প্রক্রিয়ায় পৃথিবী আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে। বিশ্বে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ভূকম্পন হচ্ছে। তবে এই ভূমিকম্পনগুলো ১ থেকে ৪ মাত্রার। এগুলো টের পাওয়া যায় না। মূলত পৃথিবীর উপরিভাগ কয়েকটা খন্ডে বিভক্ত। আমরা যাকে ট্যাকটনিক প্লেট বলি। পৃথিবীতে ৭টি বড় প্লেট রয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট অনেক প্লেট রয়েছে। প্লেটগুলোর একটি আরেকটির সঙ্গে তিন রকমের সংঘর্ষ ঘটছে। একটি হলো পরস্পরমুখী সংঘর্ষ। আরেকটি বিপরীতমুখী সংঘর্ষ, তথা একটি থেকে আরেকটি সরে যাচ্ছে। আবার একট প্লেট আরেকটি প্লেটের পাশাপাশি সংঘর্ষ হয়।’
‘এরমধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরস্পরমুখী সংঘর্ষ বড় ধরনের ভূকম্পন সৃষ্টি করছে। আর এই আচরণ ঘটছে দেশের পূর্বের অংশে। এখানে ইন্ডিয়ান প্লেট নিচে চলে যাচ্ছে আর বার্মা প্লেট উপরে পশ্চিমের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখানে বছরের পর বছর ধরে শক্তি (স্টিম এনার্জি) জমা হচ্ছে। জমায়িত এই শক্তি যখন বেরিয়ে আসবে তখন বড় ধরনের ভূকম্পন সৃষ্টি করবে। তবে বড় ভূকম্পন নির্ভর করবে এই শক্তি কিভাবে বের হয়। জমা শক্তি যদি কয়েকবারে বেরিয়ে আসে তাহলে কম্পনের মাত্রা কম হবে,’ জানান অধ্যাপক আনোয়ার।
অবশ্য ভূ-তত্ত্ববিদ হুমায়ুন আখতারের মতে, ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে যেকোন সময় বড়মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। ‘আমরা সিলেট থেকে কক্সবাজারের অংশটি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এমন অঞ্চল (সিলেট-কক্সবাজার) পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে, যেখানে ৮ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। আমাদেরটাও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে দীর্ঘ বছর ধরে যে শক্তি সঞ্জয়িত হচ্ছে তা ৮.২ মাত্রার বেশি ভূকম্পন সৃষ্টি করতে পারে,’ বললেন অধ্যাপক আখতার।
এই অঞ্চলে আগের ‘বড়’ ভূমিকম্প
সর্বশেষ ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। যার উৎপত্তিস্থল ছিল মিশমি পাহাড়। সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৫। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ভারতের প্রায় চার হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। এই ভূমিকম্প বাংলাদেশেও অনুভূত হয়েছিল তবে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ভারতের অরুণাচল প্রদেশে ভূমিকম্পের ১৫ বছর আগে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে বড় ভূমিকম্প হয় দেশটির বিহার রাজ্যে। ওই ভূমিকম্পে ভারতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছিল। তবে ওই ভূমিকম্প কতমাত্রার ছিল তা জানা যায়নি। এর আগে ভারতের মেঘালয় ভয়াবহ ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয় ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে। এটা গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক নামেও ডাকা হয়। শিলং প্ল্যাটুতে এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ঘটে। যার আনুমানিক মাত্রা ছিল ৮.২।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ‘ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের রিখটার স্কেলের প্রচলন ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে। এর পূর্বের ভূমিকম্পগুলোর মাত্রা যেগুলো বলা হচ্ছে সেগুলো আনুমানিক ধারণা।’
মাত্রা নিয়ে সংশয়ের কথা জানালেও শিলং প্ল্যাটুর এই ভূমিকম্প যে ব্যাপক ছিল বলছেন তিনি। ‘ওই ভূমিকম্পের কথা লোকমুখে রয়েছে। কথিত আছে ভূমিকম্পের ব্রিটিশরা ভয়ে তাঁবু টাঙিয়ে থাকতেন। অনেকে নৌকায় বসবাস শুরু করেন। জানা যায় ১৬’শর বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।’
এর আগে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয় মেঘালয়ে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল মেঘালয়ের জৈন্তা পাহাড়। ধারণা করা হয় মাত্রা ছিল ৭.৫। যার প্রভাব সিলেট শহর এবং আশপাশের এলাকায় পড়েছিল। মেঘালয়ের ওই ভূমিকম্পের কয়েকবছর আগে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে মধুপুর ফল্টে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। যার উৎপত্তিস্থল ছিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়। এটি বেঙ্গল ভূমিকম্প নামে ডাকা হয়। এই ভূমিকম্পের প্রভাবে ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং পাবনায় প্রাণহানি ঘটে।
ভারতের মেঘালয়ের শিলং প্ল্যাটুতে যেসব বড় ভূমিকম্প হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ভূমিকম্প। ওই ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে বলে জানান ভূতত্ত্ববিদরা। এর আগে একই দশকে ১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে টেকনাফ থেকে মায়ানমার (বর্তমান) অংশে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। ধারণা করা হয় যেটি ৮.৫ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ছিল। ওই ভূমিকম্পের ফলে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড তিন মিটার উপরে উঠে আসে। এর আগে সেন্টমার্টিন ছিল ডুবন্ত দ্বীপ। এই ভূমিকম্পের কারণে বঙ্গোপসাগরে সুনামি হয়েছিল। সুনামির কারণে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে বাড়িঘর ভেসে গিয়েছিল। পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছিল বলে জানা যায়।
এছাড়া চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় ১৫৪৮, ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৭৬৫, ১৮১২, ১৮১৮, ১৮২২, ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। তবে এগুলো বর্ণনা তেমন একটি নেই।
একই জায়গায় কত বছর পরপর ভূমিকম্প হয়?
যেসব জায়গায় অতীতে ভূমিকম্প হয়েছে, সেসব স্থানে ভবিষ্যতে ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণত এসব স্থানে একবার শক্তি নির্গত হলে শক্তি সঞ্চার হতে একটা সময় নেয়। বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সেই সময়টা দীর্ঘ হয়। একে ভূমিকম্পের ‘রিটার্ন পিরিয়ড’ ধরা হয়। তবে এই সময়টা কত হতে পারে সেটির সঠিক ধারণা নেই বিজ্ঞানীদের। তবে ধারণা করা হয় ২০০ থেকে ৫০০ বছর সময় নিতে পারে আবার ভূমিকম্পে রূপ নিতে।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ‘রিটার্ন পিরিয়ড কত হতে পারে সেটি বলা যায় না। ধরুন বাংলাদেশে এক বছরের বেশি সময় ধরে বড় ধরনের কোন ভূমিকম্প হয়নি। এখন এটি আগামী ১০০ বছরেও হতে পারে। আবার ৫০০ বছরও লাগতে পারে। তবে ভূমিকম্প রিটার্ন হবে এটি নিশ্চিত।’
একই অঞ্চলে বারবার ভূকম্পন কিসের লক্ষণ?
ভূমিকম্পে গত বৃহস্পতিবারও সিলেট অঞ্চল কেঁপেছে। যেটি মেঘালয়ে উৎপত্তি হয়। এই অঞ্চলে প্রায় স্বল্পমাত্রা ভূকম্পন হচ্ছে। গত বছরও এই অঞ্চলে ভূকম্পনের খবর রয়েছে। এর আগের বছর সিলেট একদিনেই চারবারসহ কয়েকদিনে বহুবার ভূকম্পন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার ভূকম্পন হওয়া থেকে দুটি লক্ষণ বুঝা যায়।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ‘একটি হলো এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে তথা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে পারি। আবার আরেকটি হলো ছোটমাত্রার ভূমিকম্পের মধ্যে দিয়ে এখানকার ভূমির নিচে যে শক্তি জমা আছে সেটির ক্ষয় হচ্ছে। এতে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে এটি বলা যাবে না যে এখানে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে না। ছোট ভূমিকম্প হলে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সময় কিছু পিছিয়ে যায়।’
ভূমিকম্প মোকাবিলায় কেমন প্রস্তুতি প্রয়োজন?
বছর কয়েক আগে এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর চেয়ে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন তারা। তাই ভূমিকম্প মোকাবিলায় সচেতনতা, প্রস্তুতি, গবেষণা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ‘বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে কী ভয়াবহ অবস্থা হবে সেটি ধারণা করে বলা যাবে না। ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। তাই বলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আবার বসেও থাকা যাবে না। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। এতে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে। এখন এটাই আমাদের করণীয়।’
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের মতে, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সচেতনতা, প্রস্তুতি এবং গবেষণা তিনটি ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। সচেতনতার ক্ষেত্রে শিশুদের ছোটকাল থেকে ভূমিকম্পের বিষয়ে জানাতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে ভূমিকম্পের বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমনটি ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে করা হয়েছিল।’
প্রস্তুতির বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগের ক্ষেত্রে আমরা আগাম বার্তা পাই। কিন্তু ভূমিকম্পের কোন বার্তা পাই না। এটি হঠাৎ চলে আসে। তাই প্রস্তুতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতিটা আসলে কি? প্রধানত আমাদের যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে সেগুলো অপসারণ করা। আর নতুন যেসব ভবন হচ্ছে, সেগুলোতে ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া। শহরগুলোতে খোলা জায়গার ব্যবস্থা রাখা, যেখানে ভূমিকম্পের সময় মানুষ আশ্রয় নেবে। ভূমিকম্পের বিষয়ে টিম গঠন করতে হবে, যারা ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া আরও অনেক বিষয় আছে সেগুলো বের করে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে হবে।’
গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে কি মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে তা নির্ণয় করে কেমন বিল্ডিং (ভবন) তৈরি করা দরকার সেটি গবেষণার মাধ্যমে বের করতে হবে। কোথায় ভবন করা যাবে, কোথায় যাবে না এগুলো চিহ্নিত করতে হবে। ভবন তৈরির ম্যাটেরিয়ালসগুলো নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া দরকার। এছাড়া উন্নত দেশগুলোতে ভূমিকম্প নিয়ে কি কি গবেষণা হচ্ছে সেগুলো আমাদেরও করা দরকার। এটি একদিন বা এক বছরের বিষয় নয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।’
সূত্র : সংবাদ