শর্তসাপেক্ষে তৃতীয় শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হচ্ছেন

সুতীর্থ বড়াল, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

সুতীর্থ বড়াল, দৈনিক শিক্ষাডটকম :  অবশেষে বাদ পড়া ডিগ্রি (পাস) কলেজের তৃতীয় শিক্ষকেরা আট শর্তে এমপিভুক্ত হচ্ছেন। এর মাধ্যমে এক দশকের বেশি সময় বিনা বেতনে চাকরি করা তৃতীয় শিক্ষকদের অনিশ্চয়তা ও কষ্টোর অবসান হচ্ছে। 

গতকাল বুধবার ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির নিদের্শ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লেখা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

চিঠিতে বলা হয়, এমপিওভুক্ত হওয়া ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষকরা প্রভাষক হিসেবে চাকরি শুরু করবেন নবম স্কেলে, ২২ হাজার ৫০০টাকা বেতনে। এর সঙ্গে তারা অল্প কিছু বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা পাবেন।  

এর আগে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ জানুয়ারি ডিগ্রি স্তরের কয়েকজন তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরে একটি বিষয় পড়ানোর জন্য একটি কলেজে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী কলেজে দুজন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা যায়। ফলে ৩ জনকে নিয়োগ দিলেও একজন এমপিওভুক্তির বাইরে থেকে যান। কলেজগুলোতে ওই শিক্ষককে ‘তৃতীয় শিক্ষক’ বলা হয়। এমপিওভুক্ত হতে তৃতীয় শিক্ষকেরা উচ্চ আদালতে গেলে আদালত তাদের পক্ষে আদেশ দেয়। এর পর থেকে এসব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা শুরু হয়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ আগস্ট এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের পর নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে প্রায় ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক নিযুক্ত হন এবং তারা এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এই শিক্ষকরা অর্থ বিভাগ থেকে অনুমোদিত জনবল কাঠামোভুক্ত নয়। যে কারণে তৃতীয় শিক্ষকদের যোগ্যতা, বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও কর্মরত থাকা সাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করতে সম্মতির জন্য অনুরোধ জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  

তখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলে ৯ শর্তে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য মাউশি অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মাউশি সূত্র জানায়, ৯টি অঞ্চল থেকে ৭৬৮ জন শিক্ষকের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নতুন করে এমপিওভুক্ত ৫২টি কলেজের শিক্ষকরা রয়েছেন। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরের জন্য কাম্য শিক্ষার্থী আছে কি না তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ। চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর এমপিওভুক্ত করা হবে।

মাউশির এক মতামতে বলেছে, এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের জনবল কাঠামো-২০১০ প্রকাশের পর বিধি মোতাবেক সারা দেশে ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের এমপিওভুক্ত করা হলে সরকারের বার্ষিক ২৫ কোটি এক লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয় হবে।

পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির পর এবার তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির নিদের্শ দিয়েছে মাওশি।

যে আটটি শর্তে এমপিওভুক্তি 
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ডিগ্রি স্তর এমপিওভুক্ত থাকতে হবে 
২. নীতিমালা অনুযায়ী তৃতীয় শিক্ষকের নিয়োগকালীন কাম্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মরত থাকতে হবে।
৩. এ বিভাগের ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল প্রকাশিত পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যানবেইসে অনলাইনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ডাটাবেইসে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে তুলনামূলক যাচাই-বাছাই করতে হবে। ডাটাবেইসে তথ্য যথাযথ না থাকলে কোনো তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা যাবে না। 
৪. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ পাওয়া তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। 
৫. তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানে নতুনভাবে কোনো তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না।
৬. নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক কাম্য শিক্ষার্থী (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি তথ্য অনুযায়ী) থাকতে হবে। তবে বর্তমানে কাম্য শিক্ষার্থী না থাকায় কোনো শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে না পারলে পরবর্তীতে কাম্য শিক্ষার্থী পূরণ হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে এমপিওভুক্ত হতে পারবে।
৭. নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির পর, ওই এমপিও পাওয়া শিক্ষকদের নাম, পদবি, বিষয়, প্রতিষ্ঠানের নাম ও শিক্ষার্থীর সংখ্যাসহ প্রতিবেদন আগামী ৬ মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পঠাতে হবে।  
৮. প্রতিষ্ঠানে কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা (বিষয় ভিত্তিক) যথাযথ থাকতে হবে। তা না হলে ব্যক্তি এমপিওপ্রাপ্ত হবে না। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি - dainik shiksha আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002439022064209