শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে দিকনির্দেশনা নিলেন সচিবরা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব ও দফতরপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে ভোট কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, যাতায়াত, নির্বাচনি প্রচারণা,  দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও ঋণখেলাপিসহ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনীতির মাঠে সংঘাত আর সহিংসতার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে তাও উঠে এসেছে বৈঠকে। সূত্র জানিয়েছে, ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়েছে- নির্বাচনের পরিস্থিতি অনুকূলে হতে পারে, আবার প্রতিকূলও হতে পারে। পরিবেশ অনুকূল থাকলে নির্বাচন আয়োজন সহজ হলেও প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং হবে। এ জন্য পক্ষপাতহীনভাবে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন এবং পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। সূত্র জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব-অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে দুই দিন ইন্টারনেট বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন সচিবরা। তবে নির্বাচন  কমিশন সেই মতামতে সায় না দিয়ে গুজব-অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন চিন্তার পরামর্শ দিয়েছে।

অন্যদিকে নির্বাচনে অনিয়ম হলে  কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারের থাকলেও সচিবরা বলেছেন, রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে কথা না বলে যেন  কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ না করা হয়। সিইসি বলেছেন, এ বিষয়ে আইনে যা বলা আছে তাই হবে। ইসি বলেছে, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে যার যে দায়িত্ব, তারা যেন যথাযথভাবে পালন করেন। যাতে নির্বাচনের সময় কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়। এদিকে সচিবরাও আশ্বস্ত করেছেন- ইসির প্রত্যাশা অনুযায়ী সব ধরনের সহযোগিতা করার। তবে তাদের দাবি- কোনো অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে যেন যাচাই-বাছাই করা হয়। তা না হলে অফিসাররা মনোবল হারিয়ে ফেলবেন। রাজনীতির মাঠে সংঘাত আর সহিংসতার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে গতকাল। নিয়ম অনুযায়ী, গতকাল ১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন শেষ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন সচিব বলেন, ইসি বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে পক্ষপাতহীন থেকে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের। মাঠ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার নামে কোনো অভিযোগ উঠলে অবশ্যই যেন যাচাই করে দেখা হয় সে প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আরেকজন সচিব বলেন, ইসির পক্ষে বলা হয়েছে- নির্বাচনের পরিস্থিতি অনুকূলে হতে পারে, আবার প্রতিকূলও হতে পারে। অনুকূলে হলে কাজটা সহজ হলেও প্রতিকূল হলে কাজটা চ্যালেঞ্জিং হবে, তবে ভোট হবে, যেহেতু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একাধিক সচিব জানান, ইসি মাঠ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে। নির্বাচনের আগে-পরের ১৫ দিন কোনো পরীক্ষা না থাকে সেসব বিষয়ে শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা সচিবদের বলা হয়েছে। এ সময় শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা সচিবরা পরীক্ষা নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা বলেছেন। ভোট কেন্দ্রগুলো ঠিক আছে কি না, ভোট কেন্দ্রের অবকাঠামো পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও এলজিইডিকে বলা হয়েছে। যেন ভোট কেন্দ্র, ব্যালট বাক্স বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখতে কোনো অসুবিধা না হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত বাজেট আছে বলেছে, টাকা- পয়সার সংস্থান করা আছে, কোনো সমস্যা নেই।

সচিবদের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন সচিব বলেন, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া অপপ্রচার, গুজব ছড়ায় বেশি। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ রাখার প্রস্তাব ছিল সব সচিবের। তবে সেটি বন্ধ করা নয়, নিয়ন্ত্রণ রাখতে বলেছি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যোগাযোগের জন্য ফেসবুক থাকতে হবে তা নয়, ইন্টারনেট থাকবে, ফোন থাকবে, হোয়াটসঅ্যাপ থাকবে। ফেসবুকের, ইউটিউবের এ অঞ্চলের প্রতিনিধি আছে তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অপপ্রচার বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশে ভোটের দিনসহ দুই দিন ইন্টারনেট বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন সচিবরা। সূত্র জানিয়েছে, পাহাড়ি এলাকায় ভোটের সময় হেলিকপ্টার ব্যবহার হয়। তাই ঘন কুয়াশা থাকলে দুই দিন আগেই ব্যালটসহ নির্বাচনি মালামাল পাঠানোর পরামর্শ এসেছে। আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি সব ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। মন্ত্রিপরিষদের কাজটা হলো সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও সে কথাই বলেছেন। মন্ত্রিপরিষদের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসন দেখভাল করা হয়। আমাদের মাঠপর্যায়ের অসংখ্য কর্মকর্তা কাজ করছেন। কেউ অন্যায় করলে ইসি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে, মন্ত্রিপরিষদ এক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। আমরা বলেছি, এ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যেন এটা একটু যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়, যেন কোনো ভুল না হয়। এতে কর্মকর্তাদের মনোবল ভালো থাকবে। অপরাধ কেউ করলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

নির্বাচন ঘিরে কার কী কাজ, মন্ত্রণালয়গুলোকে জানাল ইসি : নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আয়োজনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর, বিভাগের প্রধানদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে সভা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীপ্রধানদের নিয়ে সভা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব, মহাপরিচালক, দফতরপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কার কী করণীয়, তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে নির্বাচনের সময় কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সকালে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় অন্তত ৪০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচনের ক্ষণগণনার শুরু থেকে তফসিলের আগে-পরে, নির্বাচনের দিন এবং ভোটের শেষ সময় পর্যন্ত যার যা করণীয়, তা যেন সঠিকভাবে পালন করা হয় এবং কাজে কোনো ধরনের সমস্যা যেন না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

বৈঠকের পর ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের বার্তা- একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে যার যে দায়িত্ব, তারা যেন যথাযথভাবে পালন করেন। ‘যাতে নির্বাচনের সময় কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়। তারাও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।’ এই বৈঠক ছাড়াও ৪ নভেম্বর নিবন্ধিত ৪৪টি দলকে কমিশনে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে জাহাংগীর আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কোনো সংলাপের আয়োজন করেনি। ইসিতে নিবন্ধিত দলগুলোর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা দুজন মনোনীত প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে ইসি যেসব কার্যক্রম নিয়েছে, তা অবহিত করবে এবং তাদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেটা শুনবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঘুষকাণ্ড চাপা দিয়ে স্কুল অডিটে মনকিউল - dainik shiksha ঘুষকাণ্ড চাপা দিয়ে স্কুল অডিটে মনকিউল শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার, জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার - dainik shiksha শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার, জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার মাউশি কমকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতৃত্বে লিয়াকত-অহিদুর - dainik shiksha মাউশি কমকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতৃত্বে লিয়াকত-অহিদুর নবম-দশমের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা আপলোডের নির্দেশ - dainik shiksha নবম-দশমের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা আপলোডের নির্দেশ ক্ষমতায় গেলে ফরম থেকে কে কোন ধর্মের সেই প্রশ্ন তুলে দেয়া হবে - dainik shiksha ক্ষমতায় গেলে ফরম থেকে কে কোন ধর্মের সেই প্রশ্ন তুলে দেয়া হবে ডাকসুতে প্যানেল বাতিলসহ ৮দফা প্রস্তাবনা ইউআরআই‘র - dainik shiksha ডাকসুতে প্যানেল বাতিলসহ ৮দফা প্রস্তাবনা ইউআরআই‘র কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026578903198242