কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় চিরকুট লিখে সন্তানসহ গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনায় শাশুড়ি-স্বামীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ মে) রাতে এ মামলা করেন নিহত জোনাকি বেগমের বাবা রইছ মিয়া।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন জোনাকির শাশুড়ি ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর শান্তিপাড়া এলাকার ফারুক মিয়ার স্ত্রী বেবী আক্তার (৫৫), স্বামী ইতালি প্রবাসী ফরহাদ মিয়া, চাচা শ্বশুর আব্দুল আজিজ মিয়ার মেয়ে কুলসুম আক্তার (২৫), আরেক চাচা শ্বশুর শাহীন মিয়া (৫৫) ও উছমান মেম্বার (৪৮)।
এ মামলার পর বুধবার সকাল ১০টায় অভিযুক্ত শাশুড়ি বেবী বেগমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, সোমবার উপজেলার শম্ভুপুর পাক্কামাথা শান্তিপাড়া এলাকার উছমান মেম্বারের বাড়ি থেকে ইতালি প্রবাসী ফরহাদ মিয়ার স্ত্রী জোনাকি বেগম ও তার শিশুপুত্র আলিফকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, জোনাকিকে শাশুড়ি বেবী বেগম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন। স্বামী ফরহাদ বিয়ের প্রথমদিকে ভালো ব্যবহার করলেও পরে মায়ের প্ররোচনায় স্ত্রীকে দেশে থাকতে শারীরিক নির্যাতন করতেন। ইতালি থেকে স্ত্রীর মোবাইলফোনে কল করে তালাক দেয়ার হুমকি দিতেন। শাশুড়ির পক্ষ নিয়ে প্রতিবেশী ননদ কুলসুমও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন।
এছাড়া চাচা শ্বশুর শাহীন মিয়া ও উছমান মেম্বার জোনাকিকে অত্যাচারে সায় দিতেন। শাশুড়ির পক্ষ নিয়ে তারাও মানসিক নির্যাতন করতেন। নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন জোনাকি। তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন শাশুড়ি, প্রতিবেশী ননদ, স্বামী, চাচা শ্বশুর শাহীন ও উছমান।
এ বিষয়ে নিহতের বাবা রইছ মিয়া বলেন, আমার মেয়েকে তার শাশুড়ি ও স্বামীসহ স্বজনরা দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করে আসছে। ঘটনার দিন আমার মেয়েকে তার স্বামী যত টাকা লাগে দিয়ে তালাক দেবে বলে ফোনে জানায়। আমার মেয়েকে তারা বাধ্য করেছে আত্মহত্যা করতে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারী প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে চিরকুটে লিখেছে- ‘ফরহাদ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তেমনি আমার সন্তানকেও ভালোবাসি। তোমার মানসিক নির্যাতন ও তোমার মায়ের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন আমি সহ্য করতে পারছি না। ফরহাদ তুমি আমাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দিয়েছো। তোমার মাও আমাকে তালাকের হুমকি দিয়েছে। আমি তোমাদের অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার ভালোবাসার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যা করলাম।’
এ বিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, নিহতের বাবা বাদী হয়ে শাশুড়ি ও স্বামীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছেন। ঘটনার দিন একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি নিহতের চিরকুট। ওই চিরকুট থেকেই জানা যায়, শিশু সন্তানকে হত্যা করে জোনাকি আত্মহত্যা করেছেন। তবে চিরকুটে শাশুড়ি ও স্বামীর অত্যাচারের কথাও লেখা রয়েছে। এ ঘটনায় শাশুড়ি বেবী আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।