এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে, একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল্, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়- কালজয়ী এসব দেশাত্মবোধ গানের শিল্পী ছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এম ফজলুল হক ও মাতার নাম আসিয়া হক। শাহনাজের ভাই আনোয়ার পারভেজ সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক এবং আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ও গায়ক। তিনি গান শিখেছেন গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে।
শাহনাজ রহমতুল্লাহর কন্ঠস্বর ছিলো অতুলনীয়। দেশাত্মবোধক গানে তিনি সবচেয়ে এগিয়ে। বাংলা গানের জগৎকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন তিনি। সেজন্যই বাংলা গানের ইতিহাসে তিনি অনন্য হয়ে থাকবেন। বিশেষ করে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে ৪টি গানই বরেণ্য এই শিল্পীর কণ্ঠের। শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘পারি না ভুলে যেতে’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’, ‘যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়’, ‘আমি তো আমার গল্প বলেছি’, ‘আরও কিছু দাও না’, ‘এই জীবনের মঞ্চে মোরা কেউবা কাঁদি কেউবা হাসি’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ ইত্যাদি।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১০ বছর বয়সে ‘নতুন সুর’ নামক চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেয়ার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম টেলিভিশনে তার গাওয়া গান প্রচারিত হয়। তিনি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলাউদ্দিন আলী, খান আতা প্রমুখের সুরে গান গেয়েছেন। পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচী টিভিসহ উর্দু ছবিতেও গান করেছেন।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একুশে পদক এবং ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে আবুল বাশার রহমতুল্লাহর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির এক কন্যা ও এক পুত্র রয়েছে, তারা হলেন নাহিদ রহমতউল্লাহ এবং একেএম সায়েফ রহমতউল্লাহ। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।