শাহবাগের মশাল মিছিলে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে নারী সমাবেশ ও মশাল মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন বাম ছাত্র ও নারী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে ‘বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র’, ‘বিপ্লবী নারী সংহতি’সহ বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের নারী নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করে।

তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো- পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের উপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা; হাইর্কোটের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করা, সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা ও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন পত্যাহার করা; ধর্মীয়সহ সকল ধরনের সভা-সমাবেশে নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, সাহিত্য-নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীকে পন্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করা, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকারী ভূমিকা নেওয়া ও সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা; তদন্তের সময় ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করে ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করা ও ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সকল মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করা; ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫(৪) ধারা বিলোপ করা এবং মামলার ডিএনএ আইনকে স্বাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর করা; পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যেকোন প্রবন্ধ নিবন্ধ পরিচ্ছেদ ছবি নির্দেশনা ও শব্দচয়ন পরিহার করা এবং গ্রামীণ শালিসের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। পাহাড়ে-সমতলে, সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারীদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে। একের পরে এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও এগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ধর্ষণকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে যায়।

তারা বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ধর্ষণের যতো মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সেগুলোর যদি বিচার না হয়, তাহলে এ দেশের জনগণ আবারও ১৯৭১ সৃষ্টি করবে, ১৯৯০ সৃষ্টি করবে। ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড আইন পাস করা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষকদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, যারা ধর্ষক সৃষ্টি করছে, তাদের জন্য কী শাস্তির কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। আজ সমাজের চারদিকে পর্নোগ্রাফির ছড়াছড়ি। আজ আমরা মানবসমাজে নয়, পশুর সমাজে বসবাস করছি। তাই শুধু ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিলেই ধর্ষণ কমবে না। বরং ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এসময় তারা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণের দাবি জানান। 

সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ একটি মশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু করে কাঁটাবন প্রদক্ষিণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। এসময় তারা ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

তাদের আগামী কর্মসূচীগুলো হলো- ধর্ষণের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে নারীদের সাইকেল র‌্যালি করা হবে। তাদের দাবিগুলো মানা না হলে আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর নোয়াখালির বেগমগঞ্জ পর্যন্ত লং মার্চ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024337768554688