শিক্ষককে আটকে রেখে পদত্যাগপত্রে সই নেয়ার অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের পটিয়ার আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি পালকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আটকে রেখে পদত্যাগপত্রে সই নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গত রোববার রাতে পটিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।

এতে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের অভিভাবক সদস্য শফিউল আক্তার চৌধুরী, রাশেদ হোসেন খাদেমী, মো. নাছির উদ্দিন, তৌফিক ইবনে সালামের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে জোর করে সই নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। 

পীযূষ কান্তি পাল জিডিতে উল্লেখ করেছেন, গত বার্ষিক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির যেসব শিক্ষার্থী পাঁচ থেকে আট বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের পুনরায় পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষার প্রথম দিন ২১ জানুয়ারি কয়েকজন অভিভাবক সদস্যদের উপস্থিতিতে ‘প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পুনরায় অকৃতকার্য হবে’ বলে মন্তব্য করেন পীযূষ কান্তি। এতে উপস্থিত অভিভাবক সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছে মৌখিকভাবে নালিশ করেন। এতে প্রধান শিক্ষক লিখিত কৈফিয়ত তলব করলে তিনি তাঁর জবাব দেন, তবে প্রধান শিক্ষক জবাব গ্রহণ করেননি।

এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতে থাকেন উল্লেখ করে পীযূষ কান্তি জিডিতে বলেছেন, রোববার সকালে তিনি প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের কাছে গিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। এরপর প্রধান শিক্ষক ওই দিন দুপুরে তাঁকে অফিস কক্ষে ডাকেন। সেখানে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা হঠাৎ কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর তাঁদের তৈরি করা পদত্যাগপত্রে পীযূষ কান্তিকে সই করতে বাধ্য করেন। এরপর পীযূষ কান্তির হাতে লেখা পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার জন্যও বাধ্য করেন, যা অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁদের মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ ঘটনার বিষয়ে কাউকে জানালে বা আইনের আশ্রয় নিলে বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দেন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে জিডি করেন পীযূষ কান্তি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন তৌফিক ইবনে সালাম বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক চট্টগ্রামের একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ায় তিনি ২ জানুয়ারি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর পর থেকে বিদ্যালয়ের প্রতি আন্তরিকতা কমে যায় তাঁর। ৪ ফেব্রুয়ারি ১১ জনের কমিটির মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও আরেক শিক্ষক প্রতিনিধিসহ ছয়জন বৈঠক করে সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেয়া হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

একই দাবি করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, পীযূষ কান্তি আগেই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। রোববার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বৈঠকে বিধি অনুযায়ী সেটি অনুমোদন হয়েছে।

এ ব্যাপারে পীযূষ কান্তি বলেন, অন্য কোনো বিদ্যালয়ে তিনি চাকরির জন্য আবেদন করেননি, চাকরিও হয়নি। তিনি আগে কোনো পদত্যাগপত্রও জমা দেননি। রোববার প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তাঁর গলা চেপে ধরে পদত্যাগপত্রে সই নিয়েছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, পীযূষ কান্তি রোববার রাতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033810138702393