শিক্ষার্থীদের কেন খেসারত দিতে হবে?শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে ক্লাস বন্ধ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একটা সময় ছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায়ই হানাহানি-সংঘর্ষ হতো। ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার জের ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেত। সেশনজট লেগে যেত। ক্ষতির মুখে পড়তেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের শিক্ষাজীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যেত। সে তুলনায় এখন শিক্ষাঙ্গন অনেক শান্ত। শিক্ষার্থীদের 

দ্বন্দ্ব-সংঘাতজনিত কারণে কোথাও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘটনার কথা আমরা বেশ কিছুদিন শুনতে পাই না।

কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ নতুন ধরনের সমস্যায় পড়েছে। এই বিভাগের শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলের জের ধরে তাঁরা ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিবাদের বলি হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা নানাভাবে শিক্ষকদের ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করা সত্ত্বেও শিক্ষকেরা তা নিচ্ছেন না। এতে সেশনজট লেগে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছেন তাঁরা।

বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। রোববার শিক্ষকদের ভেতরে আটকে রেখে বিভাগের দুটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ করেছেন। যে সময়টাতে একজন শিক্ষার্থীর পড়ার টেবিলে নিবিড় পাঠে ডুবে থাকার কথা, সেই সময় তাঁকে ক্লাস ও পরীক্ষার দাবিতে স্লোগান দিতে হবে—এটা সভ্য সমাজের কথা হতে পারে না।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, বিভাগের নতুন সভাপতির সঙ্গে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে। শিক্ষকেরা বিভাগের অন্য সব কার্যক্রম সঠিকভাবে চালালেও ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন না। এই অবস্থায় বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মনজুরুল হাসান এ বিষয়ে বলেছেন, ‘শিক্ষকেরা ক্লাস-পরীক্ষা নিতে চাচ্ছেন না। যদি কোনো শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা না নেন, তাহলে আমার কিছু করার থাকে না।’ একটি বিভাগের সভাপতি যখন এমন কথা বলেন, তখন হতাশ হতে হয়।

ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মতভিন্নতা থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে তাঁরা এর জের ধরে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারেন না। এটি স্পষ্ট অন্যায় ও অনৈতিক কাজ। এর জন্য শিক্ষার্থীরা যদি সেশনজটে পড়েন, তাহলে সেই ক্ষতি এই শিক্ষকেরা কীভাবে পুষিয়ে দেবেন? ক্ষতির শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা কি এই শিক্ষকদের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা ধরে রাখতে পারবেন? নিশ্চয়ই পারবেন না।

সর্বোপরি কথা হলো, এভাবে চলতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্য দিয়ে চলে। সেখানে কোনো শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারী আচরণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। যেখানে শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নেওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া, সেখানে উল্টো শিক্ষার্থীদেরই যদি ক্লাস নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের অনুরোধ করতে হয়, তাহলে সেটি গোটা শিক্ষকসমাজের জন্যই লজ্জাকর। দ্রুতই শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তা না হলে এ ঘটনা ও খারাপ নজির দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যা কারও কাম্য নয়।  

সূত্র: প্রথম আলো


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029020309448242