শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব : রাতের খাবার দেওয়া হয়নি ৮০ শিক্ষার্থীকে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ভৈরব উপজেলার প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা থেকে এক শিক্ষকের অব্যাহতির ঘটনায় উত্তেজনার জেরে প্রায় ৮০ শিক্ষার্থীকে গত সোমবার রাতের খাবার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে তাদের মাদরাসার আবাসিক হোটেলে প্রবেশ করতে না দিয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রধান ফটকের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

খবর পেয়ে মধ্যরাতে মাদরাসায় যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান। তার নির্দেশে রাত দেড়টার দিকে রান্না করে শিক্ষার্থীর মধ্যে খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবার না দেওয়া এবং ফটকের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চেয়ে মাদরাসার মুহতামিম মাহমুদুল হাসানকে নোটিশ দিয়েছেন ইউএনও। এ ঘটনায় মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের খাবার না দেওয়ার বিষয়ে মুহতামিম মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাকে না বলে তারা সভাপতির কাছে গেছে। শুধু তার কাছেই না, আরও অনেকের কাছেই গেছে। মাদরাসায় খাওয়া, পড়া, ঘুমানো নিয়মের মধ্যেই চলে। তারা ওই দিন নিয়মের মধ্যে ছিল না। সে কারণে খাবার বন্ধ রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে। শহরের কমলপুর এলাকায় অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। মাদরাসাটির জ্যেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমাদ উদ্দীন বছর দুয়েক আগে এই মাদরাসায় যোগ দেন। যোগদানের কিছুদিন পর থেকে মুহতামিম মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কিছুদিন আগে ইমাদ উদ্দীনের বিরুদ্ধে এক ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন মাহমুদুল। ২৩ মে ইমাদ উদ্দীন কর্মস্থল থেকে অব্যাহতি নেন। ২৪ মে মাহমুদুলের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেন ইমাদ উদ্দীন।

অভিযোগে ইমাদ উদ্দীন উল্লেখ করেন, শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি জনপ্রিয় শিক্ষক। একই সঙ্গে মুহতামিম মাহমুদুলের অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকা-ের প্রতিবাদ করেন তিনি। সম্প্রতি মুহতামিমের অনৈতিক কর্মকা-ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তিনি এর প্রতিবাদ করেন। এতে মুহতামিম তার প্রতি ক্ষুব্ধ হন। ২৩ মে ক্লাস করার সময় মুহতামিম ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে তাকে অপমান করেন। শারীরিকভাবে নির্যাতনের চেষ্টা করেন। শেষে জোর করে তার কাছ থেকে কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়ার স্বাক্ষর আদায় করেন।

এ ঘটনার পর মাদরাসার শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ইমাদ উদ্দীনের অব্যাহতি ঠেকাতে মাঠে নামে। তারা নানাভাবে শিক্ষকের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেন মুহতামিম। গত সোমবার সন্ধ্যায় শতাধিক শিক্ষার্থী মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. ফুল মিয়ার কাছে গিয়ে শিক্ষক ইমাদ উদ্দীনকে ফিরিয়ে আনার দাবি করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা মাদরাসায় এসে দেখে, মাদরাসার প্রধান ফটক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় রাত ১১টার দিকে ছাত্ররা মাদরাসায় প্রবেশ করতে পারলেও রাতের খাবার দেওয়া হয়নি। তাদের জানানো হয়, যারা মুহতামিমের বিরুদ্ধে নালিশ করতে গেছে, তারা খাবার পাবে না। খবর পেয়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে মাদরাসায় আসেন ইউএনও মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান ও মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. ফুল মিয়া। ইউএনও এসে রান্না করে খাওয়ানোর নির্দেশ দেন। পরে রাত দেড়টার দিকে খাবার পরিবেশন করা হয়।

ইমাদ উদ্দীন বলেন, সামনে মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল নিয়োগ করা হবে। এই পদে আমি প্রার্থী। আমি আবার মুহতামিমের পছন্দের না। মুহতামিম চান পদটিতে তার পছন্দের মানুষকে বসাতে। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে মুহতামিম আমাকে পথের কাঁটা মনে করছেন। পথের কাঁটা সরাতে আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ধর্ষণের কথা বলছেন। অথচ কাকে ধর্ষণ করলাম, সেটি বলতে পারছেন না।

এ বিষয়ে মাদরাসাটির মুহতামিম মাহমুদুল হাসান বলেন, ইমাদ উদ্দীনের ইমান-আখলাক দুর্বল হয়ে গেছে। ক্লাস ফাঁকি দেন তিনি। ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে মুহতামিম বলেন, ছোট ছোট ছাত্রদের কাছে টেনে বাজে কিছু করেন। মুখে বলা যাবে না। অনেকে আমার কাছে এমন অভিযোগ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইমাদ উদ্দীনের চলে যাওয়া ইস্যুতে পরিচালনা পর্ষদেও বিভক্তি দেখা দেয়। সভাপতি মো. ফুল মিয়ার মতে, ইমাদ উদ্দীনকে বিদায় করে দেওয়ার বিকল্প ছিল না। আবার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ইমাদ উদ্দীন একজন ভালো শিক্ষক। বিপরীতে মুহতামিম মাহমুদুল বদমেজাজি। কথায় কথায় ছাত্রদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে ইউএনও মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, ‘রাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। মুহতামিমকে শোকজ করেছি। আবার মুহতামিমের বিরুদ্ধে ছাত্র নির্যাতনের কিছু প্রমাণ হাতে এসেছে।’ ইমাদ উদ্দীনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ইউএনও বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য - dainik shiksha দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম সংস্কার চেয়ে হাইকোর্টে রিট - dainik shiksha মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম সংস্কার চেয়ে হাইকোর্টে রিট যোগদান থেকেই বেতন পাবেন যেসব শিক্ষক - dainik shiksha যোগদান থেকেই বেতন পাবেন যেসব শিক্ষক যোগদান থেকেই বেতন পাবেন যেসব শিক্ষক - dainik shiksha যোগদান থেকেই বেতন পাবেন যেসব শিক্ষক আসামে বসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ‘ভারত বিরোধী’ পোস্ট, যে পদক্ষেপ নিলো কর্তৃপক্ষ - dainik shiksha আসামে বসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ‘ভারত বিরোধী’ পোস্ট, যে পদক্ষেপ নিলো কর্তৃপক্ষ গণহত্যার মদদদাতাদের দাপটে স্থবির বাউবি - dainik shiksha গণহত্যার মদদদাতাদের দাপটে স্থবির বাউবি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029048919677734