দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সংসদ নির্বাচনে হারিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার মতো মাঠপর্যায়ের কোনো শিক্ষক আর নেই। তবে কয়েকজন শিক্ষক আছেন যারা আগে থেকেই এমপি বা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তারাও এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
সমাজের বিবেক হিসেবে পরিচিত শিক্ষকরা একসময় রাজনীতিতে আসতেন। তখন সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার বিষয় ছিলো না। জনগণ তাদের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের বেছে নিতেন। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের চেয়ারম্যান বা এমপির পদে বসতে জনগণই বাধ্য করতেন। রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণের ইচ্ছাকে মূল্য দিত। অনেক শিক্ষকই এমপি হয়েছেন। জাতীয় সংসদে তাদের গঠনমূলক ভূমিকা জাতি গঠনের কাজে লাগত। সে অবস্থা আর নেই। শিক্ষকরা রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে বিলীয়মান। শিক্ষকরা এমপি হয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য বিশেষ কিছু করেছেন এমন উদাহরণ পাওয়া যায়নি। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সমাজে এখনো শিক্ষকদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তবে, গ্রহণযোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা কমছে। শিক্ষক পদে নিছক চাকরিজীবীর সংখ্যা বেড়েছে।
নির্বাচনী তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুজন সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়েও আসন সমঝোতার কারণে শেষ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। দুজন একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি হয়েও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রয়েছেন। কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনেই থাকেননি।
এখন একটি বেসরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আগামী নির্বাচনে শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি।
রাজধানীর সিটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মেহেরপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত। একাদশ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে তিনি কুমিল্লা-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি ওই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। যদিও তারা দুজনই শিক্ষকের চেয়ে ডাক্তারদের প্রতিনিধি হিসেবেই বেশি পরিচিত। পেশাজীবী ক্যাটাগরিতেও তারা ডাক্তারদের মধ্যে পড়েন।
আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সদস্য সদস্য তাহমিনা বেগম দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মাদারীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনিও একজন শিক্ষক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ আওয়ামী লীগের হয়ে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি, তিনি ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে রাজশাহী-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত; নির্বাচনী এলাকায়ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভালো অবস্থানে রয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আসাদুল হক। তিনি বাংলাদেশ অবসর সুবিধা বোর্ডের সাবেক সদস্য সচিব। তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। কুমিল্লার সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ কুমিল্লা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু একাদশ জাতীয় সংসদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে সদস্য সদস্য হয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি ওই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাজুকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হয়।