দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী : পাঠদান শুরু সকাল ৯টায়। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হন ৭টায়। আগে কোচিং, পরে শুরু হয় নিয়মিত পাঠদান। এ চিত্র রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শতবর্ষী সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের। এ ছাড়া বিদ্যালয়টি ঘিরে চলছে মাদক কারবারসহ নানা অনৈতিক কার্যক্রম।
গত বুধবার সকাল ৮টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। কেন কোচিং করানো হচ্ছে– জানতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বাইরে অপেক্ষারত কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৫০। এর মধ্যে ৬০০ থেকে ৬৫০ জন প্রাইভেট পড়ছে। না পড়লে ফেল করিয়ে দেয়া হয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে তারা সন্তানদের পড়তে দিয়েছেন। একাধিক অভিভাবক রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তারা।
কুদরত আলী নামে এক অভিভাবক বলেন, বড় মেয়েকে অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়নি। ৩০০ টাকা দিয়ে খাতা দেখেছি। ১০ নম্বরের একটি ই-মেইল লেখায় দুটি বানান ভুল হয়েছে। সেখানে পুরো নম্বর কাটা হয়েছে। একই অবস্থা বিজ্ঞান বিষয়েও। শুধু শ্রেণি শিক্ষকের কাছে কোচিং না করায় তাকে ফেল করানো হয়েছে।
আরেক অভিভাবক জামাল হোসেনের মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তাকে শ্রেণি শিক্ষক সুরাইয়া ইয়াসমিন প্রাইভেট পড়তে বলেছিলেন। না পড়ায় ১ নম্বরের জন্য অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বেগম বলেন, কিছু ছাত্র আছে ক্লাসে পড়া বুঝে নিতে পারে না। তাদের অভিভাবকদের অনুরোধেই শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস হিসেবে টিউশনি করান। এটাতে খারাপ কিছু দেখি না। তবে ইচ্ছেকৃতভাবে ফেল করানোর বিষয়টি সঠিক নয়। কয়েকজনকে চেষ্টা করেও পাস করানো যায়নি। তারা পড়াশোনায় খুবই দুর্বল।
এদিকে শিক্ষার্থীদের একাংশ ও বহিরাগত মাদক কারবারিদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি চক্র। ফোন করলেই সীমানাপ্রাচীরের ওপাশ থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে মাদক সরবরাহ করে চক্রটি। গত ১৫ নভেম্বর বিদ্যালয়টির ওয়াশরুমের ভেতর মাদক সেবনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে কয়েক শিক্ষার্থীকে মাদক সেবন করতে দেখা যায়। এতে এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর রেশ না কাটতেই গত ৩ ফেব্রুয়ারি কয়েক শিক্ষার্থীর গাঁজা সেবনের আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্লাস শুরু হয় সকাল ৯টায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সকাল ৭টায় প্রাইভেট পড়তে আসে। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী পড়া ফাঁকি দিয়ে ওয়াশরুমসহ আনাচে-কানাচে মাদক সেবন করে। তাদের কেউ কেউ প্রথমে শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় মাদক সরবরাহ করে। কৌতূহলের বশে মাদক সেবনের পর ফিরে আসতে চাইলেই বাধে বিপত্তি। তখন কৌশলে মাদক সেবনের ছবি তুলে তাদের ব্ল্যাকমেইল করা হয়। সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীর মাদক সেবনের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। আবারও টাকা চাইলে না দেওয়ায় তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। প্রধান শিক্ষককে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ছেলেকে হেনস্তার বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদক সেবনের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বেগম বলেন, প্রতিষ্ঠানে মাদক সেবনের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও ভিডিও দেখিনি। প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোহেল হোসেন বলেন, শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়ানোর বিধান নেই। তদন্ত করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইচ্ছাকৃত ফেল করানোর বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।