স্কুলের কোচিং ক্লাসে জ্যামিতি এঁকে দিতে না পারায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে বেত দিয়ে বেদম মারধর করেছে তার শিক্ষক। শিক্ষকের বেত্রাঘাতে চোখে গুরুতর জখম হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে মাশরাফুল আল কারী (১৪) নামে ওই শিক্ষার্থী।
নগরীর ইপিজেড থানার বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফ বিল্লাহ বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক।
মাশরাফুলের বাবা মো. কামরুজ্জামানবলেন, ‘প্রতিদিনের ন্যায় গত শনিবারও (৫ আগস্ট) আমার ছেলে কোচিং ক্লাসে যায়। ওই দিন কোচিংয়ে দ্বিতীয় ঘণ্টায় গণিত ক্লাস ছিল। ক্লাসে ছাত্রদের জ্যামিতি আঁকতে দেন শিক্ষক আরিফ বিল্লাহ। স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী আমার ছেলে জ্যামিতি অর্ধেক আঁকতে পেরেছে। পুরোপুরি আঁকতে পারেনি।’
‘এ কারণে আমার ছেলেকে টেপ মোড়ানো বেত দিয়ে মারধর করেন ওই শিক্ষক। একপর্যায়ে ছেলের বাম চোখ ফুলে যায় এবং রক্ত বেরিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কোন প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক বুঝে ওঠার আগেই ওই শিক্ষক আরেক ছাত্রকে দিয়ে ছেলেকে বাসায় পাঠিয়ে দেন।’
তিনি বলেন, ‘বাসায় এসে দেখি ছেলের চোখ ফোলা, চোখের মনি থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। দেরি না করে দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে আবার পাশের সেভরন হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চোখে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেন।’
‘চিকিৎসকরা বলেছেন আমার ছেলের বাম চোখে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, তারপর অপারেশন। ছেলের সামনে জেএসসি পরীক্ষা, তাই তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে আবারো নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। ছেলে বাম চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে না। চোখে ছানি পড়ে গেছে। ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছে অপারেশন করার। তবে অপারেশন হলেও বাম চোখে দেখতে পাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা ডাক্তাররা দিতে পারছেন না।’
এই জঘন্য ঘটনার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের চোখ নষ্ট করে দিয়েছে শিক্ষক আরিফ বিল্লাহ। আমি এর বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন এম জি সবুর বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফ বিল্লাহকে আমরা ইতিমধ্যে শোকজ করেছি এবং সাময়িক বরখাস্ত করেছি।
স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের স্কুল পরিদর্শক কাজী নাজিমুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করা যাবে না। এরপরও কোন শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করেন, এ ধরনের লিখিত অভিযোগ পেলে সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’