শিক্ষকের মৃত্যুর ৯ মাস পর হত্যা পরিকল্পনা ফাঁস!

বরগুনা প্রতিনিধি |

বরগুনার স্কুল শিক্ষক নাসির হাওলাদারের মৃত্যুর ৯ মাস পর তাকে হত্যার পরিকল্পনার কল রেকর্ড ফাঁস করেছে। সে কল রেকর্ডের সূত্র ধরে শিক্ষক হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শিক্ষক নাসিরকে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী ফাতেমা মিতু (২৪) এবং পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়াকে (২০) গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী মিতু ও তার প্রেমিক রাজু শিক্ষক নাসিরকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

এদিকে গতকাল বুধবার আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্ত করার জন্য শিক্ষক নাসিরের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বরইতলা এলাকা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়।  

পুলিশ জানায়, মামলা তদন্তের স্বার্থে বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নাসিরের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার জয়রাজ হোসেন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্বরজিত কুমারের উপস্থিতিতে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। মরদেহের অবশিষ্ট অংশ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য মহাখালীর ল্যাবে পাঠানো হবে। 

বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) শহীদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গত বছরের ২৩ মে রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির হাওলাদার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। ‘হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া’ মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তার মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা। এ ঘটনার ৯ মাস পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ফোনে শিক্ষক নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস হয়। ওই রেকর্ড পুলিশের কাছে পৌঁছানোর পর নাসিরের ভাই আবদুল জলিল বরগুনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এরপর পুলিশ নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু (২৪) এবং মিতুর কথিত পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়াকে (২০) গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী মিতু ও তার সহযোগী রাজু নাসিরকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। 

নাসির বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া এলাকার গয়েজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি গালবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। স্ত্রী ফাতেমা মিতু বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা এলাকার মো. মাহতাব মৃধার মেয়ে। তিনি বরগুনার থানাপাড়া এলাকায় বাবার ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) স্বরজিত কুমার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনায় করা মামালার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বরগুনা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে মরদেহ ময়নাতদন্তের আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের বিচারক ইয়াসিন আরাফাত মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এ কাজে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক ও তদন্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন আদালত। মরদেহ উত্তোলনের পর প্রাথমিকভাবে মাথার খুলিতে কালো দাগ, নাকের সামনের অংশ ভাঙ্গা শনাক্ত হয়েছে। নিহতের মরদেহের অংশ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য মহাখালীর ল্যাবে পাঠানো হবে। তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলেও এই তদন্ত কর্মকর্তা জানায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071301460266113