শিক্ষকের সন্তান ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

হাইস্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিএনপির নেতাও ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের পিতা আলহাজ আবদুল হাকিম হাওলাদার।  গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীর চর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামেও মতিউর গড়েছেন বিপুল সম্পদ। অবশ্য এখানে তার নিজের চেয়ে ভাই কাইয়ুমের সম্পদের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। এলাকায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে বাঁধ দিয়ে আটকে দিয়েছেন জোয়ার-ভাটার খাল। তার বিরুদ্ধে মানুষকে নানাভাবে হয়রানির পাশাপাশি দুর্ভোগে ফেলার অভিযোগও রয়েছে।

মতিউরের বাবা আলহাজ আব্দুল হাকিম হাওলাদার পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক। এমপিওভুক্ত শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি কাজীর চর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন।

 জানা যায়, স্কুল জীবন থেকেই মেধাবী ছিলেন মতিউর। তিনি মুলাদীর পাশের উপজেলা বাবুগঞ্জে খালার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছেন। পরিবারে ৩ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত হাকিম হাওলাদারের পরিবারে তেমন সচ্ছলতা ছিল না। গ্রামে জায়গা-জমির পরিমাণও খুব বেশি ছিল না। তবে ৯১ পরবর্তী বিএনপির শাসনামলে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের উত্থানের পর থেকেই পালটে যেতে থাকে এই পরিবারের অর্থবিত্তের চিত্র। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মুলাদীর এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘বিএনপি শাসনামলের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন মতিউর। সাইফুরের ছেলেরা ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রাজস্ব ক্যাডারে যাওয়ার আগে ১১তম বিসিএসে ট্রেড ক্যাডারে চাকরি হয়েছিল মতিউরের। ট্রেড ক্যাডার বিলুপ্ত হলে পছন্দ অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডারে যাওয়ার সুযোগ পান ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সাইফুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসাবে তখনই রাজস্ব ক্যাডারে ঢুকে পড়েন মতিউর। তাছাড়া সাইফুর রহমানের সূত্র ধরে চাকরি জীবনেও তিনি আরও অনেক সুযোগ বাগিয়ে নেন।’[inside-adf-1]

রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের যোগদানের পর এই পরিবারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিএনপি আমলে তিনি বাবা হাকিম হাওলাদারকে ভোটে দাঁড় করিয়ে কাজীর চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানান। ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হিসাবে বিএনপির মনোনয়নেই তখন চেয়ারম্যান হন হাকিম হাওলাদার। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কাজীরচর ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী। ওয়ান-ইলেভেনকালীন সময়ে চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষ হলেও নানা উপায়ে আরও প্রায় ৪ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন হাকিম। বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা কালাম হাওলাদার বলেন, ‘বাবাকে চেয়ারম্যান বানাতে প্রচুর টাকা খরচ হয় মতিউরের। সে সময় পুরো টাকাই তিনি দিয়েছিলেন। কেননা তার অন্য দুই ভাই তখনও স্বাবলম্বী নয়। মূলত ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই এলাকায় প্রথম নিজের ক্ষমতা আর অবস্থানের জানান দেন এই রাজস্ব কর্মকর্তা।’

জীবদ্দশায় মোটামুটি একটি বাড়ি ছিল হাকিম হাওলাদারের। ওই বাড়িতে ছিলেন তাদের বংশের আরও বেশ কয়েকটি ঘরের বাসিন্দা। মতিউর ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একে একে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে মতিউর পরিবারের দখলে আছে প্রায় ২ একরজুড়ে থাকা পুরো বাড়ি। অবশ্য সম্পত্তি বিক্রি করে, নাকি অন্য কোনো কারণে অন্য বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন তা জানা যায়নি।

গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত না থাকলেও বাবার পুরোনো ঘরের জায়গায় দৃষ্টিনন্দন আলিশান বাড়ি করেছেন এই রাজস্ব কর্মকর্তা। দোতলা সেই বাড়ি বছরের অধিকাংশ সময় থাকে তালাবদ্ধ। বাড়ির সামনে করেছেন একটি মসজিদ, কওমি মাদ্রাসা এবং বাহাদুরপুর রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরুর দিকে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা বাবদ নেওয়া মোটা অঙ্কের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও স্কুল অ্যান্ড কলেজটি বর্তমানে এমপিওভুক্ত। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বরিশালের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে তার কাছে অনেক দায় ছিল আমাদের। যে কারণে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-মসজিদে দানের নামে টাকা বা সহযোগিতা চাইলে না করতে পারতাম না।’ এলাকায় বিএনপি ঘরানার বলে পরিচিত মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রচণ্ড ক্ষমতার দাপটও ছিল। তার বাড়ির পেছনে ছিল একটি জোয়ার-ভাটার খাল। ক্ষমতাবলে সেই খালের দুদিকে বাঁধ দিয়ে আটকে দেন মতিউর। বহতা খালকে এভাবে আটকে লেক বানিয়ে তিনি পৈতৃক ভিটার সৌন্দর্য বাড়িয়েছেন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বাহাদুরপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘জোয়ার-ভাটার খাল আটকে দেওয়ায় শুকনো মৌসুমে ফসলি জমিতে সেচ দিতে দুর্ভোগে পড়েন কৃষকরা। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে সেচের ব্যবস্থা করতে হয় কয়েকশ একর জমিতে। ফলে বেড়ে যায় ফসল উৎপাদনের খরচ।’ খালে বাঁধ দেওয়ার সময় বাধা দিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘মতিউর রহমানের প্রভাব ও ক্ষমতার দাপটের কারণে কেউই তখন বাধা দেওয়ার সাহস পাননি।’

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য মতিউর রহমান এবং তার ভাই কাইয়ুম হাওলাদারের ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তারা ফোন ধরেননি। গ্রামের বাড়িতে থাকা মতিউরের ছোট ভাই নুরুল হুদাও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাদরাসা শিক্ষকরাও অষ্টম গ্রেড পাবেন - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকরাও অষ্টম গ্রেড পাবেন নেড়ি কুকুরের ভাষণে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগ বিত্তান্ত - dainik shiksha নেড়ি কুকুরের ভাষণে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগ বিত্তান্ত বাংলাদেশের পাঠ্যবই ভারতে ছাপাতেই হবে কেনো? - dainik shiksha বাংলাদেশের পাঠ্যবই ভারতে ছাপাতেই হবে কেনো? অধ্যক্ষ জুবাইদা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন! - dainik shiksha অধ্যক্ষ জুবাইদা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন! ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার : সেনাবাহিনী যা যা করতে পারবে - dainik shiksha ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার : সেনাবাহিনী যা যা করতে পারবে তিন ক্যাটাগরির গুণী শিক্ষক বাছাইয়ে নাম পাঠানোর আহ্বান - dainik shiksha তিন ক্যাটাগরির গুণী শিক্ষক বাছাইয়ে নাম পাঠানোর আহ্বান মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041220188140869