এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শেষ জীবনের প্রত্যাশা অবসর ও কল্যাণ ভাতা। কিন্তু অবসর সুবিধা বোর্ডের অর্থসংকট আর কল্যাণট্রাস্টের হঠকারিতায় চাকরি থেকে অবসরের তিন-চার বছরেও অবসর ও কল্যাণ ভাতা পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। বর্তমানে প্রায় ৬১ হাজার আবেদনের স্তূপ জমে আছে।
জানা যায়, প্রায় ৩২ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষক অবসরে যান। আর মাসে অবসর ও কল্যাণ ভাতার জন্য প্রায় ৮০০ আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু একজন শিক্ষক মাসে ৬ শতাংশ হিসেবে অবসর তহবিলে যে টাকা জমা দেন, তা দিয়ে পাওনাদার অর্ধেক শিক্ষককে টাকা দেওয়া যায়। বাকি অর্ধেক টাকা সরকার নিয়মিতভাবে না দেওয়ায় জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। অপরদিকে কল্যাণট্রাস্টে ৪ শতাংশ টাকা জমা দেন এবং কোনো ঘাটতি না নেই। তাই আবেদনের দুএকমাসের মধ্যেই পাওয়ার কথা থাকলেও হঠকারিতায় শিক্ষকদের ভোগান্তি।
জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই অবসর ও কল্যাণ ভাতার আবেদন অনলাইনে গ্রহণ করা হচ্ছে। একবার অনলাইন চালু করেও তা আবার বন্ধ করা হয়, রহস্যজনক কারণে। এখন অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের আর ঢাকায় আসতে হয় না। কিন্তু এখন কবে টাকা পাবেন সেই খোঁজ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষকরা এসে ভিড় করেন ব্যানবেইস ভবনে। ফলে বেসরকারি শিক্ষকদের দুর্দশা কোনোভাবেই কমছে না।
অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আগে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কথা কেউ ভাবেননি, কোনো বিশেষ বরাদ্দও দেননি। ফলে অবসরে যাওয়ার পাঁচ-ছয় বছর পরেও শিক্ষকরা তাদের প্রাপ্য টাকা পেতেন না। তবে এখন প্রতি বছরই বাজেটে কিছু না কিছু টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে যে পরিমাণ শিক্ষক অবসরে যান তাদের পাওনা মেটাতে আমাদের এককালীন বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। আমরা আগামী বাজেটে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। সেটা ডিসভার্স মানি হিসেবে পেলে অনেক শিক্ষকের পাওনা মেটানো সম্ভব হবে।
তিনি জানান, বর্তমানে অবসর সুবিধা বোর্ডে সিড মানি হিসেবে ৬৬০ কোটি টাকা জমা রয়েছে। যেই টাকায় হাত দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এর লভ্যাংশ অবসর সুবিধার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। আগামী অর্থবছরেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবসর বোর্ডের জন্য বরাদ্দ রেখেছে। তবে এর বেশিরভাগই সিড মানি হিসেবে দেওয়া হবে। ফলে সেই টাকা দিয়ে পাওনা পরিশোধ করা যাবে না।
জানা যায়, সরকার আগামী অর্থবছর থেকে সার্বজনীন পেনশন চালু করছে। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেহেতু আগে থেকেই পেনশন পান, তাই তারা এর আওতায় আসবেন না। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কিন্তু পেনশন পান না। তারা চাকরি শেষে এককালীন অবসর ও কল্যাণের টাকা পান। এখন শিক্ষকদের জন্যও অবসর বোর্ড ও কল্যাণের মাধ্যমে পূর্ণ পেনশন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।