শিক্ষক কেনো বদলি চান

গাজী সালাউদ্দিন |

‘আমি চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারি না চিৎকার’। প্রতিদিন বুকফাটা আর্তনাদ আমার মধ্যে। বারবার আপনার মাঝে ফিরে যেতে আমার মন ব্যাকুল থাকে। ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার…’- ঠিক তাই। আমিও স্বপ্ন দেখি, আমি বাড়ির পথে হেঁটে হেঁটে আমার বাড়ির পাশের কিংবা নিজ জেলা শহরের বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যাচ্ছি। আমার সবটুকু উজাড় করে দিয়ে আমার শিক্ষার্থীদের ভালোবাসি আমি।

সরকার নির্ধারিত বারোটি এক হাজার টাকা আর একটি পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে আমার চাকরি জীবন শুরু হয়। বাড়ি থেকে অনেক অনেক দূরে আমার চাকরি। বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা, চাকরি জীবনের প্রথম দিকে বিয়ে করে নব সংসারী প্রবাসীর মতো বাংলাদেশি পরবাসী আমি। চাকরি জীবনের ঘাটতি পূরণ হয় না, পূরণ হয় না শিখন ঘাটতিও। শিখন ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত যদি হয় শুক্রবারেও খোলা রাখার-আমি মানবো। কারণ, শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর অধিকার ও আমার কর্তব্য আমি জানি। শিখন ঘাটতির সঙ্গে ঘাটতি আমার হাসিতে ও অভিনয়ের হাসি হাসতে গিয়ে স্ক্রিপ্টের মধ্যে থাকা নিজের চরিত্র ‘মকবুল সাহেব (ছদ্ম নাম)’ বারবার নির্যাতিত হয়। 

যারা নির্যাতন করেন, তারা সব জানেন-মানেন না কিছুই। কারণ, তারা জানে আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমি চাইলেও যেতে পারবো না। আমার প্রিয়তমা স্ত্রী আমার পাঠানো কম দামি শাড়ি পড়ে বাড়ির দরজায় তাকিয়ে থাকে। ক্লান্ত আর অবসন্ন চোখে সেও এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে। আশা ছিলো, ঈদের বোনাস পেলে মা’র জন্য একটা কাপড়, বাবার জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা আর বৌয়ের জন্য লাল পেড়ে শাড়ি কিনে দেবো। সে ভাগ্য কি আর আমার আছে? অনুদানের চেক ব্যাংকের হেড অফিসে আসলো কিন্তু স্থানীয় শাখায় আসতে আসতে অনুদানের টাকা আর বোনাস পেলাম ঈদের একদিন আগে। আমার স্বপ্নগুলো এভাবেই মার খায়।

ছুটি চাইলেও তা নিয়ে কতো বাহানা! মাত্র না ছুটি নিলেন। এভাবে সবাই ছুটি চাইলে প্রতিষ্ঠান চলবে কেমন করে? হায়রে জীবন! আমার নাকি শরীর মন কিছুই থাকতে নেই। আমি তো এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত। তাই, মানসিকতা বলে আমার কিছু নেই, সবকিছু কোনো এক অদৃশ্য হায়নার কবলে পড়েছে। শরীরটা পড়ে থাকে আমার বিদ্যালয়ে আর মনটা বাড়ির পথে। এভাবেও বেঁচে থাকা যায়। মাসিক অনুদানের কিছু টাকা নিজের কাছে রেখে আর হোটেলের খাবারের অনভ্যস্ত আমি অনেক দিন ধরে ভুলে গেছি মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ। স্ত্রীর পরম সেবা। 

অনেকেই বলেন, ‘ভাবিকে নিয়ে আসেন’। আমি বলি, ‘সময় হলে অবশ্যই নিয়ে আসবো’। জানি না সেই সময়ের সময় কখন হবে। আমাকে ফিরতে দিন আমার নিজ এলাকায়, নিজ উপজেলায় আর তা যদি না হয় অন্তত নিজ জেলায়। বারো হাজার পাঁচশ টাকার অনুদানের সংসার ভালো রাখতে বদলির পদ্ধতি স্থগিত না করে আর একটিবার কি ভাবতে পারেন না সবাই। আর একটু ভাবুন, আমাদের পারিবারিক শান্তি দিন। এ শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশের সেইসব শিক্ষকদের পরিবারে যারা আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য নিজের পরিবার থেকে শত শত মাইল দূরে থাকেন। 

লেখক: শিক্ষক, চারিতালুক দারুল হুদা আলিম মাদরাসা রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন) 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৪০ দিনের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ - dainik shiksha ৪০ দিনের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ বন্যা: ৮ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ, নিহত ২ - dainik shiksha বন্যা: ৮ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ, নিহত ২ উপবৃত্তি দিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha উপবৃত্তি দিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান এমপিওর দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের মানববন্ধন - dainik shiksha এমপিওর দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের মানববন্ধন দুর্নীতিবাজ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির আল্টিমেটাম: মর্যাদা রক্ষা কমিটি - dainik shiksha দুর্নীতিবাজ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির আল্টিমেটাম: মর্যাদা রক্ষা কমিটি বন্যা পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় চালু রয়েছে ৪৪৪টি মেডিক্যাল টিম - dainik shiksha বন্যা পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় চালু রয়েছে ৪৪৪টি মেডিক্যাল টিম একদিন ছুটি নিলেই মিলবে চার দিনের ছুটি - dainik shiksha একদিন ছুটি নিলেই মিলবে চার দিনের ছুটি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023539066314697