শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রক্সিদাতা খুঁজতে ঢাবিতে এসে যুবক আটক

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা চক্রের অন্যতম সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। তার হোয়াটসঅ্যাপে মিলেছে সরকারি বিভিন্ন পরীক্ষার কয়েকশ প্রবেশপত্র। অভিযুক্ত কাওসারের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েক শিক্ষার্থীকে নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার এই প্রক্সি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। 

অভিযুক্ত কাওসার আলী 

জানা গেছে, আটক কাওসার আলী জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুয়াতপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনে ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে পড়ালেখা শেষ করে বেছে নেন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার পেশা। নিজে প্রক্সি দেয়ার পাশাপাশি গড়ে তোলেন প্রক্সি পরীক্ষার নেটওয়ার্ক। সরবরাহ করেন প্রশ্নপত্রও।

তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে মিলেছে শত শত চাকরি প্রত্যাশীর প্রবেশপত্র।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়া শিক্ষার্থীকে নিতে ঢাকায় এসে ধরা পড়েছেন তিনি। প্রক্সি পরীক্ষার টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের কাছে তুলে দিয়ে কৌশলে সটকে পড়ে চক্রের বাকি সদস্যরা। খবর পেয়ে ছুটে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম।

অভিযুক্ত কাওসার জানান, ছাত্রলীগের জয়পুরহাট জেলার শীর্ষ এক নেতা ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের কলেজ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষায় বসবেন। এজন্য তার হয়ে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের প্রক্সি শিক্ষার্থীর খোঁজে শুক্রবার ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরীক্ষায় বসার জন্য ২০ হাজার টাকা এবং পাস করলে এক থেকে দেড় লাখ টাকার চুক্তি হয়। 

কাওসার বলেন, ‘ঢাবির এই প্রক্সি চক্রের সদস্যদের সঙ্গে আগে মোবাইলে যোগাযোগ করে একজন ছেলেকে নেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। তাদের সঙ্গে সব চুক্তি হয়। এরপর টিএসসিতে আসতে বলে। এখানে আসার পর তারা আগে টাকা চায়। না হলে প্রক্সির ছেলেকে দেবে না বলে জানায়। তখন আমি বলি, এখন টাকা দিতে পারব না। আপনি পরীক্ষা দেবেন, শেষ করার পর আমি টাকা দেব। আপনাদের সব ডকুমেন্টস দিয়ে দেয়া হবে। এরপর তারা আমাকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা আমাকে টিএসসির ভেতরে নিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে দিয়ে সটকে পড়ে।’

প্রক্সিকাণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী জড়িত বলেও স্বীকার করেন কাওসার। এরমধ্যে মহসিন হলের দুজন এবং বিজয় একাত্তর হলের দুজনের নাম বলেছেন তিনি। এদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং যেকোনো চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি শিক্ষার্থী সরবরাহ করতেন।

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থী প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত বলে জানান কাওসার। ৩টি পরীক্ষায় নিজেই প্রক্সি দিয়েছেন কাউসার। দেশের বাইরে থেকে চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলেও জানান আটক হওয়া কাওসার।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে দেয়। তবে এ বিষয়ে ক্যামেরায় কথা বলেনি শাহবাগ থানা পুলিশ।
 
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান বলেন, আটক হওয়া কাওসারের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। ফলে তাকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। মামলার পর বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে আমাদের কোনো শিক্ষার্থী আসলেই জড়িত আছে কি না। যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা। এদিন দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে স্কুল-২ ও স্কুল পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নেন দুই লাখ ৫১ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী। আর আজ দ্বিতীয় দিন শনিবার (১৩ জুলাই) কলেজ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ পরীক্ষা চলবে বেলা ১২টা পর্যন্ত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049839019775391