শিক্ষক নিয়োগ : সমালোচনার মুখে ফল সংশোধনেও অনিয়ম!

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি |

লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ছিল না। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলে (লিখিত ও মৌখিক মিলিয়ে) রোল নম্বর এসেছে। অর্থাৎ চূড়ান্ত তালিকায় রোল থাকা ব্যক্তি চাকরির জন্য মনোনীত হয়েছেন। সদ্য প্রকাশিত খাগড়াছড়ি জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে এমন অনিয়মের অভিযোগে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। সেই সমালোচনার মুখে বিষয়টিকে ‘প্রিন্টিং মিসটেক’ বলে চালিয়ে দিয়ে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানেও অনিয়ম ধরা পড়েছে।

অভিযুক্ত ৭৭১ রোল নম্বরটি তালিকা থেকে বাদ দিতে গিয়ে এবার নতুন করে ৪টি রোল নম্বরে পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে। সংশোধিত ফলাফল থেকে এবার বাদ পড়েছে ৭৭১, ১৬৫৪, ৩২১৬ ও ৩৮৩৮ রোল নম্বরধারী ব্যক্তিরা। আর তাদের জায়গায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন চার জনকে। সেই চার জনের রোল নম্বরগুলো হলো- ৮৮৪, ২০৮২, ৩২৪৬ ও ৩৮৩৭।  

পরীক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, চূড়ান্ত তালিকা থেকে একজনকে বাদ দিতে গিয়ে চার জনের রোল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেই জায়গাগুলোতে নতুন চার জনকে অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

দেখা গেছে, গতকাল (৬ অক্টোবর) প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে সমালোচনার মুখে কর্তৃপক্ষ শনিবার (৭ অক্টোবর) সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করে। ওয়েবসাইটে সেই ফলাফল আজ প্রকাশ হলেও আগের তারিখ ও স্মারকে সই করেছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘কাজ করলে ভুল হতেই পারে। ফলাফল পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে যাচাই-বাছাই করে এবং সমস্ত ত্রুটি দূর করে প্রকাশ করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ১ হাজার ২৪৯ জন পরীক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়ে। ওই সময় লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ক্রমানুসারে প্রকাশ হয়। ওই ফলাফল সিটে ৭৭১ রোল নম্বর ছিল না। কিন্তু গত ৬ অক্টোবর প্রকাশিত চূড়ান্ত (লিখিত ও মৌখিক) তালিকায় দেখা যায়, ৭৭১ রোল নম্বরটি রয়েছে। অর্থাৎ ৭৭১ রোল নম্বরধারী প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। তবে এই রোল নম্বরটি কীভাবে চূড়ান্ত তালিকায় এলো এবং সেটি কার তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল বলেন, ‘নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। প্রথমে ২৫৭ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত ফলাফলে ৩৩৭ জনের রোল নম্বর এসেছে। অর্থাৎ ৩৩৭ জনকে চাকরির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে। প্রথমত, লিখিত পরীক্ষা হয়েছে ক্রুটিপূর্ণ উত্তরপত্রে। দ্বিতীয়ত, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয়ত সেখানে জেলা প্রশাসকের কোনো প্রতিনিধি ছিল না। চতুর্থত ক্রমিক অনুসারে কখনো ফলাফল ঘোষণা হয় না। ফলাফল ঘোষণা হয় মেধাক্রম অনুসারে। এ ছাড়া পরীক্ষার্থীদের নামও প্রকাশ করা হয়নি। ঘুষ ও দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগের উদাহরণ ৭৭১ নম্বর ক্রমিক। যে রোল নম্বরটি লিখিত পরীক্ষায় না থাকলেও চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।’

খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল আলম বলেন, ‘গত দু’দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখলে বুঝতে পারবেন, কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যেসব নিয়ম-কানুন রয়েছে তার কোনোটিই মানা হয়নি।’ তিনি পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া তদন্ত করে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যব্স্থা নেওয়ার দাবি জানান।

এভাবেই অনেকের সমালোচনার মুখে শনিবার খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের ওয়েবসাইটে সংশোধিত চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেই ফলাফলেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037338733673096