১৬তম নিবন্ধনে ভৌত বিজ্ঞান বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মো. হাবিব মিয়া। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) প্রকাশিত ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক পদে নিয়োগের ‘বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি’ অনুসারে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন তিনি। কিন্তু আবেদনের চারমাস পার হয়ে গেলেও এখনো ফল পাননি। তিনিসহ এ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে আবেদন করা প্রার্থীরা দ্রুত বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল চাচ্ছেন।
এদিকে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেও সুপারিশ না পাননি প্রার্থী এইচ এম রুহুল আমিন। ঝালকাঠি জেলার এ প্রার্থী পৌরনীতি বিষয়ে বিভিন্ন কলেজে নিয়োগ পেতে ১০টি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির ফলে সুপারিশ মেলেনি। সম্প্রতি যোগদান না করা পদগুলোতে দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থীদের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। সে সিদ্ধান্তে আশায় বুক বেঁধেছেন এ প্রার্থী। তিনি দ্রুত দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করার দাবি জানিয়েছেন।
শুধু মো. হাবিব মিয়া বা এইচ এম রুহুল আমিনই নন, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা সারাদেশের প্রার্থীরা দ্রুত ফল দাবি করছেন। আর তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ না পাওয়া প্রার্থীরা অপেক্ষায় আছেন দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশের। কিন্তু মে মাসে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রার্থী সুপারিশ ও দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করার পরিকল্পনা থাকলেও তা হয়নি। মে মাসের শেষ দিনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএর কর্তারা বলছেন, এ নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বা সম্মতি এখনো মেলেনি।
বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রত্যাশী মো. হাবিব মিয়া দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মে মাসের শেষে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ফল দেয়া হচ্ছে না। চারমাস আগে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে এখনো ফল পাইনি। অনেক প্রার্থীর বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় আছি। বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ না হলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম শুরু করবে না এনটিআরসিএ। সেজন্য আমরা দ্রুত বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল দাবি করছি।
দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ প্রত্যাশী এইচ এম রুহুল আমিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এরপর দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশের ঘোষণা দেয় শিক্ষা প্রশাসন। তাই আশায় বুক বেঁধেছি যদি কোনো যোগদান না করা পদে দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ পাই। অপেক্ষায় আছি। দ্রুত দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করলে এ অপেক্ষার পালা শেষ হবে। আমি সুপারিশ না পেলেও অন্য একজন হয়তো পাবেন। তার স্বপ্ন পূরণ হবে।
জানা গেছে, মোট সাড়ে ২২ হাজার শিক্ষক পদে প্রার্থীদের নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করতে যাচ্ছে এনটিআরসিএ। এরমধ্যে ১৫ হাজার ১৬৩ পদে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা প্রার্থীদের এবং ৭ হাজারের বেশি পদে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে যোগদান না করা পদগুলোতে আবেদন করা পরবর্তী প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ সুপারিশ করা হবে।
বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার শিক্ষক পদে নিয়োগ আইনি জটিলতায় আটকে ছিল। এসব পদে নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী আবেদন করেছেন। গত মার্চ মাসেই এ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল এনটিআরসিএর। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।
বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১৫ হাজার ১৬৩ শিক্ষক পদে আবেদন নেয়া হয়েছিলো। এ গণবিজ্ঞপ্তির ১৫ হাজারের বেশি পদে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়। এরমধ্যে এমপিও পদ ছিলো ১২ হাজার ৮০৭টি ও ননএমপিও পদ ছিলো ২ হাজার ৩৫৬টি। এসব পদে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৭টি আবেদন পাওয়া গেছে। এ নিয়োগের সব প্রস্তুতি শেষ হলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়ায় নিয়োগ সুপারিশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
অপরদিকে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে যোগদান না করা ৭ হাজারের বেশি পদে প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করা হবে। এরমধ্যে ৪ হাজারের বেশি পদের যোগদানে প্রার্থীরা ভিরোল ফরম পাঠাননি। আর তিন হাজার তিনশ পদে প্রার্থীরা ভি-রোল ফরম পাঠালেও যোগদান করেনি। এসব পদে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় আছে এনটিআরসিএ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল ও দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এখনো মেলেনি। অনুমতি পেলে আমরা প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করবো। আমরাও চাচ্ছি প্রার্থীদের দ্রুত নিয়োগ সুপারিশ করতে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না পাওয়ায় এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।