আমরা জানি, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন। আর যিনি এই আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তনের কান্ডারি তিনিই হলেন শিক্ষক। শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর আর শিক্ষকের কারখানা বিদ্যালয়। পিতামাতা সন্তানকে পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখান ঠিকই, কিন্তু সন্তানকে পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে উঠতে যার অক্লান্ত পরিশ্রম নিহিত, তিনিই হলেন শিক্ষক। শিক্ষকতা মহান পেশা। সেই মহান পেশায় আত্মত্যাগের মহান প্রত্যয় নিয়েই শিক্ষকেরা নিজেকে শিক্ষার্থীদের কাছে অকাতরে বিলিয়ে দেন। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়েও চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের শিখা জ্বালাতে। একজন শিক্ষক ছাত্রদের কাছে আদর্শস্বরূপ। তাই শিক্ষকেরা যা করেন, শিক্ষার্থীরা সেটা অনুকরণ করে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের প্রদীপ ও আশার আলো ছড়িয়ে তাদের সুপ্ত প্রতীভাকে বিকশিত করে মনোজগেক পূর্ণ করেন। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ককে জগ ও মগের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, এখানে শিক্ষককে জগ এবং শিক্ষার্থীকে মগের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। জগভর্তি পানি থেকে যেভাবে ধীরে ধীরে মগে পানি ঢেলে আমরা যেমন পানি পান করতে পারি, ঠিক তেমনি শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের দ্বারা আমরা ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হই। তারা তাদের শিক্ষাদানের পরিধি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না। পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তবিক চিন্তা-চেতনা আমাদের মধ্যে জাগ্রত করেন। তাদের উপদেশ ও কাজ আমাদের চলার পথের পাথেয় হিসেবে কথায় ও কাজে বাস্তবমুখী হতে সাহায্য করে।
যেহেতু শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত্, সেহেতু শিক্ষকই জাতি গঠনের নির্মাতা। কুমোর যেমন মাটিকে বিভিন্ন আকৃতিতে প্রলেপ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করেন, ঠিক তেমনি আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা আমাদের একেকটা বিষয়ে পারদর্শী হতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ফলে আমাদের ভালো ক্যারিয়ার গঠন যেমন সহজ হয়, তেমনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কীভাবে সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সব প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে, সেটাই শিক্ষা দেন।
আজ যে আমরা এই জায়গা পর্যন্ত আসতে পেরেছি, সেটাও আমাদের অনেক শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলাফল। একটি শিক্ষিত ও রুচিশীল জাতি গঠনে শিক্ষকেরা নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আজ ১৯ জানুয়ারি, জাতীয় শিক্ষক দিবস। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে তত্কালীন সরকার এই দিবস চালু করে। জাতীয় শিক্ষক দিবস। আজকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই শিক্ষদের, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা প্রত্যেকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে পেরেছি এবং তাদের আদর্শ অনুসরণ করে অনেকটা পথ এখনো যাওয়া বাকি।
বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে আমরা সবাই যার যার বাসায় আছি। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নেও অত্যন্ত কষ্ট করে শিক্ষকেরা সাহসী যোদ্ধার মতো আমাদের পাশে আছেন অনলাইনে ক্লাস নিয়ে, যাতে আমরা সেশনজটে না পড়ি। তাদের জন্য দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি, যাতে ভবিষ্যতে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ দেশে একেকটা সোনার সন্তান তৈরী করে দেয়, যারা দেশের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে, জাতি এমন প্রত্যাশাই করে।
লেখক : সানজিদা ইয়াসমিন লিজা, আইন বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়