শিক্ষক যখন নরসুন্দরের ভূমিকায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চুল কাটিবার কর্মটি নরসুন্দরের। উপমহাদেশের এই অঞ্চলে পূর্বে নরসুন্দরের কর্মটি ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের শীল গোত্রের বংশানুক্রমিক পেশা। সময়ের বিবর্তনে এখন মুসলমানদের কেহ কেহ এই পেশাটি গ্রহণ করিয়াছেন বটে, কিন্তু কোনোক্রমেই ইহা স্কুল বা মাদরাসার শিক্ষকের কর্ম নহে। তথাপি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কুশালা নেসারিয়া সিনিয়র ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. বাকের হোসাইন একটি কাঁচি হাতে লইয়া দাখিল শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা চলিবার সময় প্রবেশ করিয়া ২০ জন শিক্ষার্থীর মাথার চুলে কাঁচি চালাইয়াছেন। নিশ্চয়ই তিনি সুচারুরূপে, পরিপাটি করিয়া, যত্ন লইয়া শিক্ষার্থীদের চুল কাটিতে পারেন নাই। অনুমেয় শিক্ষার্থীদের চুলে কেবল শিক্ষকের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই ফুটিয়া উঠিয়াছে। আর সেই কারণেই শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হইয়াছেন তাহাদের এই অধ্যক্ষের প্রতি। শনিবার (১৯ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট হইতে জানা যায়, বাংলা পরীক্ষার প্রথম ঘণ্টা পড়ার পর ঐ শিক্ষক হঠাৎ করিয়াই কক্ষে প্রবেশ করিয়া চুল কাটিতে থাকেন। এই ঘটনায় পরীক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করিয়া বাহির হইয়া আসে। পরে তাহাদের না ফিরিলে দাখিল পরীক্ষা দিতে দেওয়া হইবে না বলিয়া হুমকি দিলে তাহারা আবার হলে ফিরিয়া যায়। তবে কী কারণে তিনি পরীক্ষার মতো একটি স্পর্শকাতর সময়ে হলে প্রবেশ করিয়া শিক্ষার্থীদের চুল কাটিয়া দিয়াছেন, উহার প্রকৃত কারণ কী সেই সম্পর্কে যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান করিতে পারেন নাই। ইত্তেফাকের রিপোর্টেও উহার উল্লেখ নাই। তবে তিনি বলিয়াছেন, দাখিল পরীক্ষার আগের দিন সকলকে চুল কাটিয়া মাদ্রাসায় আসিতে বলিয়াছিলেন। তাহার কথার অবাধ্য হওয়ায় তিনি চুল কাটিয়া দিয়াছেন। তিনি ইহা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে করিয়াছেন বলিয়া দাবি করিয়াছেন। প্রশ্ন হইল, ২০ জন শিক্ষার্থীর চুল বড়ো হইয়া থাকিলে তাহা এক দিনে হয় নাই। ঠিক পরীক্ষার আগের দিনই কেন এই চুল কাটাইয়া পরিষ্কার হইবার তাগিদ উঠিল? মাথার চুলের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার সম্পর্ক কী তাহাও ঠিক পরিষ্কার নহে। 

আমরা জানি, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ আদালত শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি বেআইনি এবং অসাংবিধানিক বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। সেই মোতাবেক একই বত্সর শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১১ ঘোষণা করে এবং পরিপত্র জারি করে। শিক্ষকের জানা উচিত ছিল, ২০ জন শিক্ষার্থীকে একই সঙ্গে চুল কাটিয়া দেওয়া মানসিক শাস্তি তো বটেই, খানিকটা শারীরিক শাস্তিও। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া খোদ প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা। এই এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ যথাযথ নিয়ম পালন করিয়া চলিবেন বলিয়াই সকলের প্রত্যাশা। কিন্তু তিনি তাহা করিলেন না কেন তাহাও কিন্তু একটি প্রশ্ন। বিষয়টি তদন্তের কথা জানাইয়াছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ইহার সঠিক তদন্ত হইবে বলিয়াই আমাদের প্রত্যাশা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024259090423584