শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মুঘল বাদশাহ আলমগীর, তাহার পুত্র শাহজাদা আর শিক্ষকের গল্প আমরা সকলেই জানি। শিক্ষকের মর্যাদা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত—এই গল্প আমাদের সেই সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। একজন ছাত্রের যে শিক্ষকের পায়ে পানি ঢালিয়া নিজ হস্তে তাহা পরিষ্কার করিয়া দেওয়ার ভিতরে কোনো অসম্মান নাই বরং এইরূপই হওয়া উচিত—এই গল্প তাহা নির্দেশ করে; কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাত্র-শিক্ষকের এই ক্লাসিক সম্পর্কটি আর নাই। সময়ের নানা সমীকরণে পালটাইয়া গিয়াছে এই সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়া। শিক্ষকদের রূপ ও আচরণে পরিবর্তন ঘটিয়াছে; পাশাপাশি বদলাইয়াছে শিক্ষার্থীদের আচরণও। সমাজ আর রাজনীতির নানান বিষয়-আশয়ও সম্পর্কটিকে জটিল করিয়া তুলিয়াছে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিস্থিতি ছিল খানিকটা ভিন্ন। এরশাদবিরোধী আন্দোলন এবং ছাত্রসংগঠনগুলির একে অন্যের বিরুদ্ধে ও আধিপত্য বিস্তার নিয়া সংঘাত-সংঘর্ষে ক্যাম্পাস থাকিত উত্তপ্ত। সেশনজট ছিল নিয়মিত ঘটনা। সেই পরিস্থিতি এখন নাই। উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন নতুন মাত্রা যোগ হইয়াছে। এইসকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-ছাত্ররা এখন জড়াইয়া পড়িতেছে দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে। শিক্ষা প্রদান বাদ দিয়া সম্পদ আর প্রভাব প্রতিপত্তি গড়িয়া তোলার প্রতিযোগিতা শুরু হইয়াছে শিক্ষকদের মধ্যে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করিতেছেন। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র প্রায় অভিন্ন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও ঘুষ নেওয়ার প্রতিবাদে ভিসি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। নীতিমালা লঙ্ঘন করিয়া শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলন করিয়াছেন শিক্ষার্থীরা। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্ল্যাট, এসি ক্রয় ও নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ রহিয়াছে ভিসির বিরুদ্ধে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, উন্নয়ন কাজে কমিশন, ছাত্রলীগকে চাঁদা প্রদানসহ নানা অভিযোগে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। ইহা ছাড়া ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করিয়াছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ও আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। ইহা ছাড়া দেশের ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বিরুদ্ধে তদন্ত করিতেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নিয়োগবাণিজ্য, অর্থ আত্মসাত্ ও অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পদায়নসহ বিভিন্ন অভিযোগ রহিয়াছে ভিসিদের বিরুদ্ধে।

টেন্ডারবাজি, কাজের ভাগ ইত্যাদি ইস্যু লইয়া শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হইয়া পড়িতেছে অনেক জায়গায়। পাশাপাশি উভয় পক্ষের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল হইতেছে। একদিকে শিক্ষকেরা নিয়মবহির্ভূত কাজ করিয়া শিক্ষার্থীদের সহিত তাহাদের দূরত্ব বাড়াইতেছেন, অপরদিকে শিক্ষার্থীরাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করিতেছেন। সম্প্রতি রাজশাহী সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে টানিয়া পুকুরে ফেলিয়া দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়াছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নত করিতে উভয় পক্ষকে নিজ নিজ কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনিতে হইবে। উভয়পক্ষকে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি ত্যাগ করিতে হইবে। আমরা আশা করিব, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক নির্মল হইয়া উঠিবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002871036529541