শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

ময়মনসিংহের নান্দাইলের মাঠিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষক কর্মরত। এ কারণে দাপ্তরিক কাজে বা ছুটিতে তিনি অন্যত্র গেলে বিদ্যালয়ে পাঠদান বিঘ্নিত হয়। এ অবস্থায় একজন অতিথি শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে চলছে ২৫০ শিক্ষার্থীর পাঠাদান।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানায়, প্রায় এক যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি রয়েছে আসবাবের সংকটও। বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদের সংখ্যা পাঁচ। কিন্তু শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন। এর মধ্যে একজন রয়েছেন ছুটিতে, একজন প্রশিক্ষণে এবং যিনি আছেন, তিনি সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। অন্য পদ দুটি শূন্য।

বিদ্যালয়ের ৫২ শতক জমির অনেকটাই পাশের রাস্তা ও নদীতে মিশে গেছে। নতুন একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় মাঠে জায়গা নেই বললেই চলে। উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টির অবস্থান হলেও চার কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী থাকায় কোনো শিক্ষকই ওই বিদ্যালয়ে যেতে চান না।

গত মঙ্গলবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের আঙিনায় দৌড়ঝাঁপ করছে। অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায় দুজন বসে আছেন। যাঁদের একজন শিক্ষক, অন্যজন দপ্তরি-কাম-নৈশপ্রহরী। শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, তিনিই বিদ্যালয়ের একমাত্র প্রধান ও সহকারী শিক্ষক! বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক তিনজন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার ১ জানুয়ারি থেকে ময়মনসিংহে ডিপিএড প্রশিক্ষণে রয়েছেন। অন্য সহকারী শিক্ষক সাফিয়া আক্তার তিন মাস ধরে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তাই সবেধন নীলমণি এক শিক্ষক দিয়েই চলছে ২৫২ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম।

তিনি আরও জানান, একা একা পাঠদান করতে গিয়ে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছেন। যে দিন বিদ্যালয়ের কাজে অফিসে যাই, সেদিন একরকম বন্ধই থাকে পাঠদান। এসব কারণে সম্প্রতি মোশাররফ হোসেন নামের একজন অতিথি শিক্ষক নেয়া হয়েছে। অবশ্য পরিদর্শনের সময় অতিথি শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। পরিদর্শন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সব শেষ ৪ আগস্ট সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এটিইও) শাকিল আহমেদ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে দেখা যায়, ২১ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬ জন উপস্থিত রয়েছে। শিক্ষার্থী বৃষ্টি আক্তার বলে, ‘নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় আমার এক সহপাঠী অন্যত্র চলে গেছে।’ একই শ্রেণির জুবায়ের হাসান বলে, ‘সামনে আমাদের পিএসসি পরীক্ষা। তাই স্যার আমাদের একটু বেশি সময় দেন। এতে অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

কীভাবে স্যার তোমাদের ক্লাস নেন জানতে চাইলে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী হেপি আক্তার বলে, ‘স্যার ক্লাসে লিখতে বা পড়তে দিয়ে অন্য ক্লাসে গিয়ে পড়ান।’

শিক্ষার্থী রিফাত হাসান বলে, ‘ক্লাস না হওয়ায় সহপাঠীদের অনেকেই নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না।’ প্রতিবেশী অভিভাবক হাসিম উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষক নেই, পড়ালেখা কেমন হবে, তা আপনারা বোঝেন না!’

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আহ্বায়ক শাকিল আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে। এ জন্য আরও দুজন শিক্ষক দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আশার রাখি, খুব শিগগির বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট কেটে যাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038690567016602