স্কুলের শিক্ষক সঙ্কট কাটাতে যুক্তরাজ্য সরকারের বৈশ্বিক উদ্যোগ অনেকটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে দেশটির স্কুল শিক্ষকদের গণহারে পেশা পরিত্যাগের ফলে ওই সঙ্কট প্রকট হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ডিসেম্বরে নয়টি দেশ থেকে লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলো তারা। বিদেশি শিক্ষকদের কর্মজীবনের শুরুতেই উচ্চহারের আর্থিক প্রণোদনা ও আকর্ষণীয় বেতনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু, কঠোর নিয়োগ পক্রিয়া যোগ্য প্রার্থীর অভাবে গত ছয় মাসে তারা লক্ষের ধারেকাছেও পৌঁছুতে পারেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই এবার তারা উচ্চ প্রণোদনা দিয়ে শিক্ষকদের পেশায় ধরে রাখতে চাইছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনের সরকার শিক্ষকদের পদত্যাগ ঠেকাতে কর্মজীবনের শুরুতেই প্রতিজনকে দুই হাজার চারশ পাউন্ড করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকার সমান।
এ ঘোষণা শিক্ষকদের পেশায় ধরে রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী তারা। এজন্য ৫০ মিলিয়ন অতিরিক্ত পাউন্ড প্রয়োজন হবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলের শিক্ষক হিসেবে পেশা শুরু করা প্রতি পাঁচ শিক্ষকের একজন করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে পেশা ছেড়ে দেন। গত দুবছরে দেশটির স্কুলগুলোতে শিক্ষক শূন্য পদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। গতবছরই প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক পেশা ছাড়েন। ফলে গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নয়টি দেশ থেকে শিক্ষক নেয়ার ঘোষণা দেয় ব্রিটেন। ওই নয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ না থাকলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চার/পাঁচ হাজার শিক্ষক নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। তাদের জন্য কর্মজীবনের শুরুতেই প্রায় দশ লাখ ভারতীয় রুপি ও প্রতিমাসে প্রায় আড়াই লাখ ভারতীয় রুপি বেতন নির্ধারণ করা হয়। ভারত ছাড়াও এশিয়ার মধ্যে হংকং ও সিঙ্গাপুর, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেন এবং আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়া, ঘানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও জ্যামাইকা থেকে শিক্ষক নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
কিন্তু, কঠিন মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য প্রার্থীর অভাবে যুক্তরাজ্য তাদের স্কুল শিক্ষক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এবার তারা উচ্চ প্রণোদনা দিয়ে শিক্ষকদের পেশা পরিত্যাগ ঠেকাতে চাইছে। তবে এজন্য শিক্ষকদের কঠিন প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রাথমিক ক্যারিয়ার ফ্রেমওয়ার্ক কর্মসূচির আওতায় অন্তত দুবছর সময় কাটাতে হবে শ্রেণিকক্ষের পাঠদানে। সূত্র: ইকোনমিক টাইমস, বিবিসি