শিক্ষক সংকটে ব্যাহত বন্দরের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি |

নারায়ণগঞ্জ বন্দরের আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার নারী শিক্ষকের তিনজনই আছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে, কুশিয়ারা ভদ্রাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো টয়লেট, ৭১ নম্বর আমৈর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে বহুদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমনই নানামুখী সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বন্দরের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষক স্বল্পতা, কোচিং বাণিজ্য, পাঠদানে অমনোযোগিতা, কারণে অকারণে ক্লাসের বাইরে অবস্থান, ঝরে পড়ার হার বাড়ার কারণে বন্দরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। এ কারণে এসবের প্রভাব পড়ছে শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর। ফলে অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে ভর্তি করছেন। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দরে ৭৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে ৬২টি। ৯টি বিদ্যালয়ের কোনো টয়লেট নেই। ফলে এসব স্কুলে ছাত্র-শিক্ষকদের বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গেলে শিক্ষার মান নিয়ে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। কবি  নজরুল স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন ৯ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ সবাই নারী। শিক্ষকরা অধিকাংশ সময় শিক্ষক কক্ষে খোশগল্পে মেতে থাকেন বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।

জানা যায়, ধামগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৭১ নম্বর আমৈর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী একজন প্রধান শিক্ষক, চারজন সহকারী শিক্ষক, একজন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক ও একজন দপ্তরি থাকার কথা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চলছে প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরিবিহীন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক তিনজন থাকলেও সরকারি বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কারণে প্রায়ই স্কুলটিকে এক বা দুজন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস চালানো হয়। এ ছাড়া  প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে ঝগড়া ও কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে। এতে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে।

তবে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ‘স্কুলটি প্রথমে কমিউনিটি বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের পদে থেকেও সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা ও স্বীকৃতি না পাওয়ায় ২০১৭ সালে আদালতে একটি মামলা করি, যা এখনো বিচারাধীন।’

স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষক সংকট আছে, বিষয়টি সবার জানা। আমরা উপজেলায় শিক্ষকের জন্য কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। আগামী কিছুদিন পর সরকার নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে, তখন আমরা একজন শিক্ষক পাব বলে আশ্বাস পেয়েছি। তখন এ সমস্যা কমে যাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন জানান, আমৈর স্কুলে প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে একটি মামলা বিচারাধীন আছে, নিষ্পত্তির আগে স্কুলটি প্রধান শিক্ষক পাচ্ছে না। আর একজন সহকারী শিক্ষক অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় শিক্ষক সংকট সেখানে আছে। সরকারিভাবে শিক্ষক নিয়োগ আগামী কিছুদিন পর হতে যাচ্ছে। তখন এ স্কুলে একজন সহকারী শিক্ষক পাবে।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার বলেন, ‘বন্দরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নানামুখী সমস্যা চলছে। এসব সমস্যা সমাধানে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে ৯টি বিদ্যালয়ে টয়লেট নেই সেখানে টয়লেট নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি, অচিরেই সেটির সমাধান হবে। এ ছাড়া শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি, কোচিং বাণিজ্য রোধেও আমরা জোর তদারকি শুরু করেছি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029540061950684