বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের আবেদন গ্রহণ চলছে। এমপিওভুক্ত এসব পদের মধ্যে স্কুল ও কলেজে ৩১ হাজার ৫০৮টি এবং মাদরাসা, কারিগরি ও বিএম প্রতিষ্ঠানে ৩৬ হাজার ৮৮২টি শূন্যপদ রয়েছে। এসব পদে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ সুপারিশ পেতে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদনের জন্য প্রার্থীর বয়স ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ তারিখে ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে।
আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়, পদ ও প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী নিবন্ধনধারী হতে হবে, এনটিআরসিএর প্রকাশিত সম্মিলিত মেধা তালিকার অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, পদ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রার্থীরা এনটিআরসিএর ওয়েবসাইট ও টেলিটকের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করতে পারছেন। প্রার্থীদের একটি আবেদনে ৪০টি প্রতিষ্ঠান পছন্দ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বদলি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাবেন তাকে সেই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করতে হয় দীর্ঘদিন। তাই বেসরকারি শিক্ষক হতে আবেদন করার আগে প্রার্থীদের কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত।
স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রার্থীরা নিবন্ধিত ও যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পছন্দ তালিকায় সামনে রাখা উচিত। আবেদনের সময় একজন প্রার্থীকে নিজের এলাকা বা কাছের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পছন্দ তালিকায় সামনের দিকে দিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের অবস্থা, কর্মপরিবেশ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আর্থিক সচ্ছলতা ও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে পারলে প্রার্থীর জন্য ভালো। বিশেষ করে শিক্ষার্থী সংখ্যার বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। খোদ এনটিআরসিএ প্রার্থীদের এ বিষয়ে সতর্কথাকার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট শূন্যপদের বিপরীতে কাম্য শিক্ষার্থী নেই সেসব প্রতিষ্ঠানের এমপিও পরে বা ভবিষ্যতে বাতিল হতে পারে, বিধায় বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত যেসব এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের বিপরীতে কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী নেই সেসব পদে পরে বা ভবিষ্যতে নিয়োগ সুপারিশ করা যাবে না।
ইতোমধ্যে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা নতুন প্রার্থীদের জন্য দৈনিক শিক্ষাডটকমের মাধ্যমে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, নিবন্ধিত প্রার্থীদের আবেদনের ক্ষেত্রে নিজের মেধাতালিকা অনুযায়ী নিজের বা পার্শ্ববর্তী এলাকা, থানা, জেলা এবং বিভাগকে প্রাধান্য দেয়া উচিত, যেন ৪০ আবেদনের মধ্যেই চাকরি নিশ্চিত হয়। যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবেন, সেই প্রতিষ্ঠানে এমপিওর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী আছে কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। নিবন্ধন সার্টিফিকেটে উল্লিখিত যেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য শুধু সেসব প্রতিষ্ঠানে ভেবেচিন্তে আবেদন করতে হবে। কারণ যোগ্যতার বাইরের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে নিয়োগ সুপারিশ পেলেও এমপিও বা বেতন হবে না। প্রার্থীদের প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ফোন দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তাদের মতে সাধারণ প্রার্থীদের সুবিধার জন্য এনটিআরসিএর উচিত শিক্ষার্থী সংখ্যার তথ্য প্রার্থীদের জন্য প্রকাশ করা।
ইতোমধ্যে সুপারিশপ্রাপ্তরা বলছেন, প্রার্থীদের নিজ এলাকার আশপাশের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পর দূরের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হলে, সেই প্রতিষ্ঠান ও এলাকা সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। সেখানে যাতায়াত সুবিধা কেমন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা কি, ছুটিতে বা প্রয়োজনে নিজের আপনজনের কাছে যাওয়া-আসায় খরচ ও সময় কতটা লাগবে, এ বিষয়গুলো খোঁজ খবর নেয়া উচিত।
আর বেতনের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা উচিত। দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন হয় সরকারি কর্মচারীদের মতোই জাতীয় পে স্কেল অনুসারে। সর্বশেষ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় পে স্কেল গঠন করা হয়। এমপিওভুক্ত স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষকরা বিএড করা থাকলে এন্ট্রি লেভেলে ১০ম গ্রেডে বেতন পান। বিএড না থাকলে ১১ গ্রেডে পান। অপরদিকে কলেজের প্রভাষকরা বেতন পান ৯ নবম গ্রেডে। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দেয়া হয় ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা। অবসর সুবিধা ও শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য কেটে রাখা হয় মূল বেতনের ১০ শতাংশ। গত ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষকরা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষকরা শুরুতে ১২ হাজার ৭৫০ টাকা বেতন পান। আর প্রভাষকরা পান ২১ হাজার ৩০০ টাকা। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পেনশন সুবিধা পান না। নিয়মিত ২৫ বা তার বেশি বছর চাকরি করে অবসরে গেলে কল্যাণ ও অবসর তহবিল থেকে সর্বশেষ মূল বেতনের প্রায় ১০০ গুণ টাকা পাওয়ার বিধান রয়েছে। এসব সরকারি সুবিধার বাইরে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নিয়মের ওপর নির্ভর করে।