সাতক্ষীরায় সিটি কলেজের প্রভাষক ও ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যাসহ ১৪ নাশকতা মামলার পলাতক আসামি জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘ ৮ বছর পলাতক ছিলেন।
গতকাল বুধবার ভোর রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ উপজেলার মধুখালীতে তার বাসা থেকে র্যাব-০১ এর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। আলতাফ হুসাইন সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে র্যাব ক্যাম্পে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা নিয়ে আসা হচ্ছে। আলাতাফ হুসাইন সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান এলাকার মৃত আহছানউল্লার ছেলে।
জানা গেছে, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমান ও আলতাফ হুসাইনের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা শহরে জামায়াত- শিবিরের কয়েক হাজার সশস্ত্র ক্যাডাররা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা শহরের সিটি কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা ও সিটি কলেজের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাড়িতে হামলা করে তার স্ত্রীর সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় সার্কিট হাউজ এলাকায় জামায়াতের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইনসহ জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামুন হত্যা মামলা হয়। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে সাতক্ষীরা জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইন, সাবেক সংসদ সদস্য খালেক মন্ডল, তৎকালিন ফিংড়ী চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও উসকানিতে সাতক্ষীরা শহরে নিউ মার্কেটে হামলা ভাঙচুরসহ জেলাব্যাপী তাণ্ডব ছড়িয়ে পড়ে।
জামায়াত শিবিরের হাতে নিহত হন ১৬ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। সাতক্ষীরায় জামায়াতের সহিংসতা ও নাশকা,হত্যা,তাণ্ডবের বিষয়টি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সরকারও জামায়াতের তান্ডব সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর হয়।জামায়াতের এসব তাণ্ডবে হত্যা ও নাশকতার বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানা, কলারোয়া, দেবহাটা থানাসহ বিভিন্ন থানায় জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আলতাফ হুসাইন, তৎকালিন ফিংড়ী চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমানসহ নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।
এরপর থেকে গ্রেফতার এড়াতে জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইন সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। প্রথমে রাজধানী ঢাকায় পরে বসবাস শুরু করেন। এর কয়েক মাস পরে আলতাফ হুসাইন নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ উপজেলার মধুখালী গ্রামে জমি ক্রয় করে সেখানে বাড়ি তৈরি করে স্বপরিবারে বসবাস শুরু করেন। তার বাড়ীর নাম আরিনা প্লাজা। ওই বাড়িতে স্ত্রী কন্যা ও দুই ছেলে তাদের স্ত্রীদের নিয়ে আলতাফ হুসাইন বসবাস করতেন। তিনি ওই এলাকায় জমি কেনা বেচার ব্যবসা করতেন।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, তিনি সৌদি প্রবাসীদের কাছে জামায়াতের সাংগঠনিক পরিচয় ব্যবহার করে প্লট বেচা কেনা শুরু করেন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্লট দেওয়ার নাম করে সৌদি প্রবাসী নাসিরুল্লাহ খানের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ৫০ জনের কাজ থেকে জন প্রতি ৭ লাখ টাকা করে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। আরেক সৌদি প্রবাসী জাকির হোসেনের কাছ থেকে জমি দেওয়ার নাম করে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। মাওলানা আব্দুর রশিদের কাছ থেকে রুপগঞ্জে প্লট দেওয়ার নাম করে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। কয়েক বছর আাগে সৌদি আরবে ওমরা পালন করতে গিয়ে সেখানে সৌদি প্রবাসী নাসিরুল্লাহ ও জাকিরের সাথে আলতাফের পরিচয় হয়। এর পর থেকে নারানগঞ্জের রুপগঞ্জ ও মধুখালীতে জমির প্লট ও প্লাস ব্যবসার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় পলাতক জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইন। অভিযোগ উঠেছে গ্রেফতার এড়াতে সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর রুপগঞ্জ ও মধুখালীতে জমি কেনা বেচার পাশাপাশি এলএমপির ব্যবসা শুরু করে আলতাফ হুসাইন। এক লাখে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে লাভ দেওয়ার কথা বলে কয়েক শত মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পলাতক জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইন। এসব ঘটনায় নারানগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পে একধিক ভুক্তখোগী অভিযোগ দায়ের করেন।
গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেয়া নারায়ণগঞ্জ র্যাবের এসআই হিল্লোল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানাসহ জেলার বিভিন্ন থানায় ১৫ টির বেশি মামলা রয়েছে। তিনি গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রুপগঞ্জ থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, র্যাব বুধবার আলতাফ হুসাইনকে থানায় হস্তান্তর করে। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় একাধিক মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাকে নিয়ে সেখানে রওনা হয়েছেন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তাকে রুপগঞ্জ থানা থেকে সাতক্ষীরায় আনা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।