শিক্ষাকে আনন্দময় করতে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনা হবে : শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সনদ সর্বস্ব শিক্ষা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, গতানুগতিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থায় আনন্দ নিয়ে আসতে চাই। সংখ্যায় নয়, শিক্ষায় গুণে ও মানের দিকে নজর দিতে হবে।

শনিবার দুপুরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে তিনি যবিপ্রবির প্রধান ফটকস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. এম আর খান মেডিক্যাল সেন্টারের সামনে একটি কৃষ্ণচূড়ার বৃক্ষরোপণ এবং শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামের উদ্বোধন করেন। 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আধুনিক শ্রম বাজারে ক্রমশ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে কারণে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সানুগ্রহ নির্দেশনায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। এ কাজগুলোর জন্য গতানুগতিক চিন্তা বা শিক্ষা ব্যবস্থায় হবে না। সব জায়গায় আমাদের একটু ‘আউট অব বক্স’ চিন্তা করতে হবে। সে জন্য আমাদের জগতে পরিবর্তন আনার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা শুধুমাত্র পড়াশোনা করাচ্ছি, পরীক্ষা দিচ্ছি ও সনদ দিচ্ছি। এমনিতেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা পরীক্ষা নির্ভর এবং সনদ সর্বস্ব। একইসঙ্গে আনন্দহীন। সেটি প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থায় আনন্দ নিয়ে আসতে চাই। আনন্দ নিয়ে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করবে। তারমধ্যে অনুসন্ধিৎসার জাগ্রত হবে। সে জ্ঞান অর্জনের আনন্দেই জ্ঞান অর্জন করবে, বাধ্য হয়ে নয়। শিক্ষা ব্যবস্থার ক্রুটি খুঁজে বের করারও আহ্বান জানান তিনি।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি বলেন, বিশ্বে যোগ্যতায় টিকে থাকার একমাত্র মানদণ্ড। সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, প্রযুক্তি হলে উন্নয়নের বাহন। কাজেই নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। শুধু উদ্ভাবন করলেই হবে না, এটার যেন সঠিক প্রয়োগ হয়, সেটাও আমাদের দেখতে হবে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে এবং এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ঘটাব, ইনশাল্লাহ।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমাদের দক্ষ, সুস্থ-সবল জনশক্তি প্রয়োজন উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাশাপাশি ক্রীড়াক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ সুস্থ ও সবল এবং কর্মে উদ্যোমী প্রজন্ম আমরা গড়ে তুলতে পারি। এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। তিনি যবিপ্রবির গবেষণা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও ক্রীড়াক্ষেত্রে নৈপূণ্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে যবিপ্রবির উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন।

যশোরের উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদানের কথা স্মরণ যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু আন্তবিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পস-২০১৯ এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এ জিমনেসিয়ামটি ঢাকার ইনডোর স্টেডিয়ামের সমকক্ষ। সরকারের কাছ থেকে যে সুবিধা পাচ্ছি তা সত্যিকারভাবে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সরকারের সার্বিক সহযোগিতা। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে আগ্রযাত্রা আজ শুরু হয়েছে, আরো সহযোগিতা পেলে আমরা অতি দ্রুত তার পূর্ণতা দিতে পারব। এ সময় তিনি যবিপ্রবির সম্প্রাসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণসহ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

যবিপ্রবির ডিনস কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. নাসিম রেজার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল মজিদ, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব, পরিচালক (শরীর চর্চা শিক্ষা দপ্তর) ড. মোহাম্মদ তোফায়েল আহম্মেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা  আমীর হোসেনসহ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির যবিপ্রবির বিভিন্ন গবেষণাগার, ভবন ও নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই জিমনেসিয়াম নির্মাণ করা হয়। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026741027832031