শিক্ষাক্ষেত্রে ভালোমন্দের এক বছর

ড. নিয়াজ আহম্মেদ |

DNAআওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আগের মেয়াদকালে শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন আনয়ন ও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের কারণে শিক্ষায় আমাদের দেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

আগেকার নীতি ও কৌশল বাস্তবায়নের জন্য গত বছর শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এগুলো বাস্তবায়নে কিছু বিতর্ক ও সমালোচনা থাকলেও সময়ের ব্যবধান ও কালের আবর্তে একসময় সাধারণ মানুষ ও শিক্ষাসচেতন মানুষ এগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখবেন বলে ধারণা।

নতুন পদক্ষেপ ও নতুন কিছু প্রয়োগে বাধা ও বিপত্তি তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পরীক্ষামূলক পদ্ধতির মাধ্যমেই বিজ্ঞান তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছে বিধায় বিজ্ঞানের কদর ও সাফল্য আজ এত বেশি। নতুন কিছু প্রয়োগ না করলে পুরনো যে নতুনের তুলনায় কম সফল—এ ধারণা সৃষ্টির ক্ষেত্র থেকে আমরা বঞ্চিত হব। নিতান্ত প্রয়োজনের খাতিরে নতুনের সৃষ্টি ও প্রয়োগ আরো ভালো ও বেশি সাফল্যের সুযোগেও নতুনের প্রবর্তন প্রয়োজন। শিক্ষা আইন তৈরি ও প্রবর্তন এই অর্থে যে এর দ্বারা শিক্ষানীতিকে ফলপ্রসূ করার পথ হবে সুগম। আবার টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক কিছু সহজীকরণের প্রক্রিয়া সভ্যতার ইতিহাসে সাফল্যের এক জ্বলন্ত উদাহরণ।

গত বছর অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি শুধু সিজিপিএ-র মাধ্যমে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা সহজীকরণ ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের শামিল।

শিক্ষাক্ষেত্রে গত বছর সরকারের এসব উদ্যোগ ও পদক্ষেপ যেমন বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তেমনি আমাদের কাছে সাফল্যের সোপান হিসেবে কাজ করছে।

শিক্ষা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে শিক্ষানীতি গুরুত্বপূর্ণ। নীতিকে কার্যকর ও বাস্তবায়নের জন্য প্রধান করণীয় একে আদর্শ হিসেবে ধরে নিয়ে আইন তৈরি করা। শিক্ষা আইন প্রণয়ন প্রায় চূড়ান্ত। আইনটি পরিপূর্ণ হলে শিক্ষা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ও গুণগত শিক্ষার জন্য আমাদের করণীয় কী ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আমরা দিকনির্দেশনা পাব।

গত বছর সরকার প্রথমবারের মতো উচ্চ মাধ্যমিকে অনলাইনে কলেজ পছন্দের মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বহু বিতর্কের জন্ম হয়। পদ্ধতির সঠিক ও পরিপূর্ণ ব্যবহারে সমস্যা থাকতে পারে, তবে এর অর্থ এই নয় যে পদ্ধতি ভালো নয়। এ পদ্ধতিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অহেতুক হয়রানি ও ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার সম্ভাবনার দ্বার তৈরি হবে।

আশা করা যায়, এ বছর অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দূর করে এটিকে আরো সহজ করে ও কেউ বঞ্চিত হলে তাকে সহায়তার মাধ্যমে এ পদ্ধতি নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।

সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকায় উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির প্রয়োগ সহজ হয়েছে, তবে অন্য জায়গায় সম্ভব হয়নি। মেডিক্যাল কলেজগুলো সরকারি হলেও ভালোমন্দের বিচার-বিশ্লেষণে তারা এ পদ্ধতি প্রয়োগের দিকে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন চরিত্রের হওয়ায় এটি আজ পর্যন্ত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে সম্ভব হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে, যেখানে গত শিক্ষাবর্ষে সিজিপিএ-র মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। এ মুহূর্তে আমরা এর ভালোমন্দের বিচারে নাই গেলাম; তবে যেখানে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করানো হয় সেখানে স্নাতকে সমস্যা কোথায়? বিষয়ভিত্তিক চিন্তা করলে এখনো কলেজগুলোতে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ে পাঠদানের ক্ষেত্র নেই বললেই চলে। ভৌত, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের পড়াশোনা ও প্রয়োগ তাত্ক্ষণিকভাবে না হওয়ায় সিজিপিএ-র ভিত্তিতে ভর্তি মানানসই নয়, এমনটি বলা ঠিক নয়।

এ পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োগ সুদূরপরাহত। কেননা আমরা আজ পর্যন্ত একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কাজটি সারতে পারিনি। যেখানে সিজিপিএ-র ভিত্তিতে ভর্তি একেবারে অসম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পদ্ধতিটির সুবিধার তুলনায় অসুবিধা ঢের বেশি।

সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যে রয়েছে প্রতিবছরের মতো এবারও ১ জানুয়ারি বই উৎসব, যা সাপ্তাহিক ছুটিও রোধ করতে পারেনি। এবার নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে প্রথমবারের মতো বিলুপ্ত ছিটমহলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণের মাধ্যমে। দরিদ্র, মেধাবী ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষাসহায়তা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিল থেকে এক কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থী বৃত্তি পাচ্ছে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বই বিতরণ উৎসবে উল্লেখ করেছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের গত বছরের বেশ সময় কেটেছে পে স্কেলকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের আন্দোলন ঘিরে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদের অবনমন ও মর্যাদাহানিকে কেন্দ্র করে। শিক্ষকরা আজ প্রচণ্ডভাবে ক্ষুব্ধ। অন্যদের না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হঠাৎ করে কয়েক ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি তাঁদের জন্য অপমানজনক।

সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তির আশ্বাস পাওয়ার পরও জারীকৃত পে স্কেলে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। চাই সংকটের আশু সমাধান। গত বছরের প্রথম তিন মাস দেশে বিএনপি ও তাদের জোটের অরাজকতা ও সহিংসতার জন্য শিক্ষার্থীদের দারুণ ক্ষতি হয়েছিল। আমরা শিক্ষকরা ক্রমান্বয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি।

আমাদের আশা, পে স্কেলকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের যেন কঠোর আন্দোলনে যেতে না হয়। আমরা এর একটি সম্মানজনক সমাধান আশা করি। শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন বছর ভালো কাটুক।

লেখক : ড. নিয়াজ আহম্মেদ

অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024421215057373