কখনো বিপু কখনো দীপু, কখনোবা বনি আমিন। আবার কখনো দুর্জয়। কখনো বিউটি পার্টির প্রধান বিউটি বেগম। নাম যা-ই হোক তারা সবাই পেশাদার তদবিরবাজ। সরকারি-বেসরকারি কোনো চাকরিতে কখনো ছিলেন না তারা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়হ শিক্ষার সব অধিদপ্তরের কর্তা-- বিশেষ করে শিক্ষা ক্যাডারের কারো কারো সঙ্গে যোগাযোগ খুব গভীর!
তবে, শিক্ষা ক্যাডারের শিশির, নীলা, শরমিনা, জিগার, নিগার, মন্মথ এবং কুশিক্ষা ক্যাডারের অমিত কুমার ও রতন মজুমদাররা পাঁচ আগস্টের আগ পর্যন্ত গত বিশ বছরে বিভিন্ন শিক্ষামন্ত্রীর জমানায় সক্রিয় ও দাপুটে তদবিরবাজ ছিলেন। পাঁচ আগস্টের পরে তারা সবাই উধাও। এসেছে অনেক নতুন মুখ। দেশের শিক্ষাখাতের নানা স্তরে তক্কে তক্কে থাকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে এসেছে কয়েকটি নাম। তাদের মধ্যে তিতাস নামটি খুবই আলোচিত। কলেজ ছেড়ে অফিসে পোস্টিং পেতে ইচ্ছুক শতাধিক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার মুখে তিতাসের নাম শোনা যায়। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সম্পাদনা শাখার ও প্রাথমিক শাখার দুই জন কর্মকর্তাও ছুটছেন তিতাসের পেছনে। এনসিটিবির এই কর্মকর্তাদের ধান্দা ওখানকার সচিব পদে নিজেদের লোক বসিয়ে বাণিজ্য করা। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক পদে বসতে কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ঘুরছেন তিতাসের পেছনে। বিভিন্ন বেসরকারি বড় স্কুল-কলেজের কমিটি, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে নাম ঢোকানোর তদবিরও করেন তিতাস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে কর্মরত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের ঘনিষ্ঠ একজনকে গত সপ্তাহে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও ২৬ নভেম্বর সেই আদেশ বাতিলের কৃতিত্ব রয়েছে তিতাসের। এছাড়া ১৭ নভেম্বর একজন নারী উপসচিবকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হলেও তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টিকিয়ে রাখার কৃতিত্বও নাকি তিতাসের! এই উপসচিব থাকলে বদলি বাণিজ্য জমজমাট থাকবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে এই তিতাসের পুরো নাম মইনুদ্দিন তিতাস। ১০ আগস্টের পর তাকে দেখা গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার দপ্তরে। আরো দেখা গেছে কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কথিত এক প্রতিষ্ঠানের সিইও পরিচয় দিয়ে কার্ড বানিয়েছেন তিনি। অফিসের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির অফিসের বিপরীত পাশে। তিতাসের দুটি মোবাইল ফোন নম্বরের শেষ দু্ই ডিজিট ৫৬। বড় তদবির বাগাতে কোথাও কোথাও পরিচয় দেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদের কাজিন-কুজিন হিসেবে। কিন্তু দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা গেছে, তদবিরবাজ তিতাস ওই অভিজাত শিক্ষাবিদদের ভাই তো দুরের কথা রক্তের বা পরিবারের কেউ না।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, শিক্ষা প্রশাসনের বড় পদে বসার জন্য ইতিমধ্যে কয়েকজনার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন তিতাস। তিতাসের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবের দপ্তর সতর্ক থাকার কারণে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিলেও বদলি করার কৃতিত্ব খুব একটা দেখাতে পারেননি। তিতাসকে সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করেছেন শিক্ষা প্রশাসনেরও অনেকেই। খুব শিগগিরই পাকড়াও করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাকড়াও করার রিহার্সেল হিসেবে গত দুইদিন তিতাসকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব ও একজন যুগ্ম-সচিবের সঙ্গে আলাপচারিতার পুরোটাই ফলো করা হয়েছে। আগামী দুই কর্মদিবসও তিতাসকে ফলো করা হবে। কোথায় কোন অফিসারের কাছে যান কতক্ষণ থাকেন তার পুরো ভিডিও-অডিও প্রকাশ করা হবে।