শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতার শিকার শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন না হওয়াটাই যেন অস্বাভাবিক বিষয়! তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা ও অচলাবস্থা নতুন নয়। প্রতি বছরই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আন্দোলন, ছাত্র সংঘর্ষ, ভিসিবিরোধী আন্দোলন দেখা যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে পারস্পরিক অনাস্থা, সমন্বয়হীনতা, অনিয়ম-দুর্নীতি, দলীয় আনুগত্যের বিচারে ভিসি নিয়োগ, অন্যায়ের প্রশ্রয় ইত্যাদিই অসন্তোষের মূল কারণ। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

সম্পাদকীয়তে আরও জানাা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব ও উন্নয়ন- এ দুটি বাজেটে বড় অঙ্কের বরাদ্দ হয়। অনেক সুবিধাভোগী এ সুযোগটা নিতে চায় ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে। এটা সামাল দিতে গিয়ে ভিসিরা নানা বিতর্কের জন্ম দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগির জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদচ্যুত করা হয়। মূলত এরপরই ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয় এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়।

অভিযোগটি তখনই আমলে নিয়ে একটি সুষ্ঠু তদন্ত করা উচিত ছিল। তদন্তে তিনি দোষী বা নির্দোষ প্রমাণিত হলে তখনই তার সমাধান করা উচিত ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়ায় তা ভিসি অপসারণ আন্দোলনে পরিণত হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশ দেয়, যা মোটেও কাম্য নয়। হল ভ্যাকেন্ট কখনও কার্যকর সমাধান হতে পারে না, বরং এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতার দুর্বলতা প্রকাশ পায়।
হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশে ছাত্রছাত্রীদের খুবই অল্প সময়ের ভেতর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে হল ত্যাগ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের এই অবর্ণনীয় কষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালক ও নীতিনির্ধারকরা অনুভব করার চেষ্টা করেন না।

অপরাধীকে শাস্তি না দেয়া অন্যায়, কিন্তু নিরপরাধকে শাস্তি দেয়া শুধু অন্যায় নয়, রীতিমতো জুলুম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ভার্সিটিজীবন চলে টিউশনির টাকায়।

হল ভ্যাকেন্ট করলে তাদের হয় টিউশনি ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে হয় অথবা টিউশনি টিকিয়ে রাখতে উদ্বাস্তুর মতো জীবনযাপন করতে হয়। হল ভ্যাকেন্টের ফলে ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, যা সেশনজট সমস্যা আরও প্রকট করে তোলে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভেতরও রয়েছে অস্বচ্ছতা। গত মাসে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে, যেখানে খোদ ভিসির কণ্ঠ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতি দেশে উচ্চশিক্ষার মান আরও তলানির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যুবলীগের প্রেসিডেন্ট পদ পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের মর্যাদাপূর্ণ পদ ছাড়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আদর্শ ও মর্যাদা থেকে বিচ্যুত হয়েছেন এবং এটি সহসাই হয়নি। ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই অনাদর্শ প্রবেশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র রাজনীতিকরণের প্রভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা বাড়ছে। ফলে বারবার আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। একটি দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকা মানে এই নয় যে, সেখানে ভালো শিক্ষাব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে প্রচুর শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে।

তবে কেউ শিক্ষিত হওয়া মানেই তিনি জ্ঞানী নন। জ্ঞানার্জন হয় জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে। আমাদের দেশে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চার অনুকূল পরিবেশ নেই। তাই আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এ তালিকায় স্থান পেয়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়, সেটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা উচিত। সব আন্দোলন, অস্থিরতার মূল ভুক্তভোগী সাধারণ শিক্ষার্থীরাই। শিক্ষক-কর্মকর্তারাও একসময় শিক্ষার্থী ছিলেন।

সুতরাং তাদেরকে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো অনুধাবন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গতিধারা অনুযায়ী তদন্ত পরিচালনা করে সব সমস্যার সমাধান করা উচিত।

লেখক: শাকিল আহমেদ, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029990673065186