নোট-গাইড বই নিষিদ্ধ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের নাম দিয়ে নোট-গাইড থেকে কপি করে শিক্ষাসাগর বা শিক্ষাপাতা নামে প্রকাশ করে যাচ্ছে দেশের অধিকাংশ জাতীয় পত্রিকা। কিন্তু এসব বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। তাই যে নামে অভিহিত করা হোক না কেন- নোট বই বা গাইড বই কোনোভাবেই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। নতুন শিক্ষা আইনের খসড়ায় এমন বিধান যুক্ত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এ ছাড়া খসড়া আইনে শিক্ষকদের কোচিং করানো ও প্রাইভেট পড়ানো নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা আইনের খসড়া ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এর ১৫নং ধারায় নোট কিংবা গাইড বই সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আইনটি বর্তমানে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
খসড়া আইনের ১৫ ধারার ৩নং উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক নোট বই বা গাইড বই ক্রয় বা পাঠে বাধ্য করলে বা উৎসাহ প্রদান করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধান, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এখতিয়ারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। নোট বই কিংবা গাইড বই প্রকাশের অনুমতি না থাকলেও
খসড়া আইনে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সহায়ক বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাতের বিধান রাখা হয়েছে ৪নং উপধারায়। তবে শিক্ষার্থীদের সহায়ক বই ক্রয় বা পাঠে বাধ্য করা হলে কিংবা উৎসাহ প্রদান করা হলে তা অসদাচরণ হবে। এ ছাড়া ৫নং উপধারায় বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়া পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু এবং এর আলোকে সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর পত্রিকায় মুদ্রণ অথবা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা না করলেও শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও স্থগিত এমনকি বাতিল করা হবে। আইনের খসড়ায় ২১নং ধারায় বলা হয়েছে, এমনকি শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তি, শাখা খোলা অথবা পাবলিক পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তা প্রদান অথবা বোর্ডের নির্দেশনা প্রতিপালন না করলেও ওই শাস্তি হবে।
২৪নং ধারায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির এখতিয়ারও নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কমিটির হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে কোনো অনিয়ম বা পাঠদান বাধাগ্রস্ত হলে পরিচালনা কমিটি সার্বিকভাবে বা ক্ষেত্র মতো এর চেয়ারম্যান বা সভাপতি দায়ী হবেন। এ জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ ওই কমিটি বাতিল বা সভাপতিকে অপসারণ করতে পারবে।
প্রাইভেট টিউশন বা কোচিং প্রসঙ্গে : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে ইলেকট্রনিক বা অনলাইন পদ্ধতিতেও প্রাইভেট টিউশন বা কোচিংয়ের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। করলে তা অসদাচরণ গণ্যে শাস্তিযোগ্য হবে।
তবে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করা এই আইনের অধীন নিষিদ্ধ গণ্য হবে না। তবে শর্ত হচ্ছে- কোচিংয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালে কোচিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তা করা হলে শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে এবং কোচিং সেন্টারের নিবন্ধন বাতিলযোগ্য হবে। কোচিং সেন্টারে কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে পাঠ দান করতে পারবেন না।
তবে ভর্তিচ্ছু ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কোচিং সেন্টার পরিচালনা বা পাঠদান করা এই আইনে নিষিদ্ধ বা দণ্ডনীয় বলে গণ্য হবে না।