শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো বিপ্লব

আকতারুজ্জামান |

বর্তমান সরকার তার দুই মেয়াদে ইতিমধ্যে সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ শেষ করেছে। চলতি অর্থবছর আরও প্রায় ৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ নানা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে এই বড় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো তৈরির এসব প্রকল্প ইতিমধ্যে একনেকে পাসও হয়েছে। শেষ হয়েছে প্রশাসনিক অনুমোদন। শিগগিরই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মাণকাজ শুরু হবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর এসব নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণ শেষ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চেহারা পাল্টে যাবে আর শিক্ষার্থীরাও পাঠ গ্রহণে আরও আগ্রহী হবে এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট আট হাজার ৭৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে ২০০টি সরকারি কলেজ ও ৩২৩টি সরকারি স্কুল। এসব উন্নয়ন কাজে সরকারের ব্যয় হবে যথাক্রমে এক হাজার ৮০৫ কোটি ও চার হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। তিন হাজার বিদ্যালয়ে নতুন ভবন ও তিন হাজার ২৫০টি বিদ্যালয়ে ভবনের সম্প্রসারণ (যত তলা ফাউন্ডেশন, তত তলা সম্পন্ন করা হবে) প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এতে সরকার বরাদ্দ রেখেছে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি ও পাঁচ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মাণের ক্ষেত্রে ৩০০ আসনের প্রতিজন এমপি ১০টি করে নতুন ভবন এবং ১০টি করে সম্প্রসারণ ভবন বরাদ্দ নিতে পারবেন। এ ছাড়া বাকি ২৫০টি ভবন নির্মাণ প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে বরাদ্দ থাকছে। এ ছাড়া রাজধানীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমাতে ঢাকা মহানগরের সন্নিকটে বিভিন্ন স্থানে ১০টি নতুন সরকারি স্কুল নির্মাণ একনেক সভায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

এসবেরও নির্মাণকাজ শুরু হবে জুনের মধ্যেই। এ ছাড়া দুই হাজার মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়টি প্রি-একনেকে পাস হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান অর্থবছরে মোট আট হাজার ৭৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে। শিক্ষা প্রকৌশল সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পভুক্ত মোট ১২ হাজার ৪৯৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের মধ্যে সাড়ে ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে সরকার। বাকি দুই হাজার ভবন নির্মাণ চলমান রয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা বলেন, বর্তমানে এক হাজার ৫১টি মাধ্যমিক স্কুলে, এক হাজার ১৪৯টি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও ২৮৮টি মাদ্রাসাসহ মোট দুই হাজার ৪৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। সারা দেশে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নির্মাণকাজও চলছে। এ ছাড়া প্রায় ৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ ২০২০ সালের মধ্যে শেষ করবে সরকার। উন্নত অবকাঠামোসহ নানা সুবিধা পেলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব উন্নয়ন কার্যক্রমের নিয়মিত তদারক করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। দেওয়ান হানজালা বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা খাতে অবকাঠামো নির্মাণে বিশেষ নজর দেওয়ায় ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ সরকারের গত কয়েক বছরে নির্মাণ করা এবং এ বছর নির্মাণের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৯ হাজারে দাঁড়াবে। ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ক্লাসরুম পেলে তাদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়বে। সব মিলিয়ে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষা খাতে সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে, যার সুফল পাবে জনগণ। জানা গেছে, নির্মাণের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকবে সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট ব্যবস্থা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্যও থাকবে আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে টেন্ডারবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে ই-জিপি প্রক্রিয়ায়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মাণকাজ তদারক করতে লোকাল সুপারভাইজিং কমিটি গঠন করা হবে। স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি ছাড়াও স্কুল পরিচালনা পর্ষদ, স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্যরা এ কমিটিতে থাকবেন।

 

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044319629669189