শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পর্যালোচনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে কমিটি

মিজান চৌধুরী |

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিও নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে সরকারি হিসাবে নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩টি। এতে এমপিওভুক্ত নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে প্রতি বছর অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ মুহূর্তে এমপিও বাস্তবায়নে বিশাল অঙ্কের আর্থিক সংশ্লেষ এবং জনবল বাড়ানোর বিষয়টি বড় ধরনের চাপ মনে করছে সরকার। তাই বাস্তবতার  নিরিখে এ বিষয়ে সরকারের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করতে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।  একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান  বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে বড় ধরনের অর্থ ব্যয় হবে। এটি যাচাই-বাছাই করতে হবে। যারা এমপিও নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদের অনেকের জানা নেই এতে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ কতটুকু।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত ওই কমিটির প্রধান হবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও সামষ্টিক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন বাজেটের যুগ্মসচিব হাবিবুর রহমান। এছাড়া কমিটিতে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট পরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট পরিচালক সদস্য হিসেবে থাকবেন।

সূত্রমতে, এমপিও নীতিমালা বাস্তবায়ন, আর্থিক সংশ্লেষ ও নতুন পদ সৃষ্টি এবং কমিটি গঠনের অনুমোদন ও মতামত চেয়ে সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে একটি সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে।

সার-সংক্ষেপে ভারপ্রাপ্ত অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ইতিপূর্বে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালার বিষয়ে মতামত চেয়েছে। তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে বছরে অতিরিক্ত ৩ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। প্রস্তাবিত এমপিও নীতিমালায় জনবল বাড়ানো এবং আর্থিক সংশ্লেষ থাকায় সরকারের সামর্থ্য পর্যালোচনার জন্য এ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। কমিটি বাস্তবতার আলোকে সামর্থ্য বিবেচনায় এনে তা যাচাই-বাছাই করে একটি প্রতিবেদন প্রদান করবে।

অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সার-সংক্ষেপে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত এমপিও নীতিমালা (২০০৮) এবং বিদ্যমান নীতিমালা (২০১৩) এ দুটির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদিত বিদ্যালয়ে জনবল কাঠামো অর্থাৎ পদ সৃষ্টির সংখ্যা। এছাড়া প্রস্তাবিত নীতিমালায় নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওকরণের শর্তের ক্ষেত্রে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়নি। শুধু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসি) মেধাক্রম বা মনোনয়ন বা নির্বাচন অনুসারে করা হবে বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত নীতিমালায় শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আগের নীতিমালায় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা এখানে বাদ দেয়া হয়েছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হলে নতুন করে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩টি নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার বিভিন্ন দিক থেকে আর্থিক চাপের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে এ বছর ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজস্ব আয় নিয়ে চাপের মুখে আছে সরকার। এরপর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বাজেট থেকেই অর্থ সংস্থান করতে হবে। ফলে শেষ সময়ে এসে এ ধরনের চাপ মোকাবেলায় সরকারের সক্ষমতা কতটুকু আছে সেটি নিয়েও চিন্তার বিষয় আছে। এ কমিটি তা পর্যালোচনা করবে।

জানা গেছে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পর্যায়ের মোট ১১ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওর জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর সংখ্যা হবে প্রায় ২৮ হাজার। দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৬ হাজার ৯০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তিন লাখ ৬০ হাজার ৬৪৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। আর কর্মচারী রয়েছেন প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৭৪ জন। সব মিলিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৬৬ হাজার।

এদিকে বর্তমান বাংলা, ইংরেজি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য মাধ্যমিক স্কুলে একজন শিক্ষক নিয়োগ করার বিধান আছে। নতুন প্রস্তাবে প্রতিটি বিষয়ের জন্য একজন করে নিয়োগের কথা আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে বাংলা, ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ৩ জন শিক্ষক নিয়োগ করা যেত। এখানে আরও ১ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। সহকারী গ্রন্থাগারিক এবং এমএলএসএস পদ সৃষ্টির প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত আছে।

ইতিপূর্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে এবং দাখিল ও আলিম পর্যায়ের মাদ্রাসায় বিজ্ঞানের একজন শিক্ষকই পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা ও উচ্চতর গণিত পড়াতেন। এতে পাঠদানে জটিলতা হতো। নতুন প্রস্তাবে ভৌতবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকে প্রভাষকদের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২৫ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে হয়। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ শর্ত শিথিল করে ১৫ জন করা হয়েছে।

সৌজন্যে: যুগান্তর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024189949035645