শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ (বিপিসি) ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) নেতারা। এ সময় বক্তারা সুশাসনে বিপ্লব পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করার দাবিও জানান।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি‘র সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস- ২০২৪ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
বক্তারা বলেন, সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ সময়ের দাবি। সুশাসনে বিপ্লব পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার সহযোগিতা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার এবং দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান ও অধ্যক্ষ ইসহাক হোসেন, অধ্যক্ষ সাহিদুন নাহার, শিক্ষক নেতা লিয়াকত আলী, অধ্যক্ষ রেজাউল কবির, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ ইউসুফ, অধ্যাপক ইলিম মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন, অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, অধ্যক্ষ জহিরউদ্দিন আজম, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মন্ডল, অধ্যক্ষ এম. এ. মোনায়েম, অধ্যাপক হোসনে জাহান, অধ্যাপক কানিজ সালমা, অধ্যাপক আল মামুন প্রমুখ।
এ সসময় বক্তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিগুলো শিক্ষকদের ওপর নির্যাতন করে। এগুলো প্রতিকার করতে হবে। আদর্শ শিক্ষকরা এক চরম হতাশার মধ্যে দিন যাপন করছে। ফলে সৃজনশীল চিন্তার উন্মেষ ঘটার কোনো অবকাশ তো নেই, বরং তাদের সাধারণ দায়িত্ব পালন করার স্পৃহাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করার সুস্পষ্ট দাবি জানাচ্ছি, তবে যতোদিন জাতীয়করণ করা সম্ভব হচ্ছে না সেই অন্তর্বর্তী সময়কালে কিছু দাবি পূরণ করতে হবে।
সেগুলো হলো: ১. সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুরূপে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং অন্যান্য ভাতা যেমন- বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দিতে হবে। ২. সরকারি কলেজের অনুরূপ পদ্ধিতিতে সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা সম্পন্ন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং উচ্চতর ডিগ্রির জন্য উচ্চতর বেতন স্কেল দিতে হবে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুরূপ নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বদলি প্রথা চালু করতে হবে। ৩. সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ন্যায় আনুপাতিক হারে শিক্ষা প্রশাসনের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড, নায়েম ও এনসিটিবি ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতাসম্পন্ন বেসরকারি শিক্ষকদের লিয়েন-ডেপুটেশনে নিয়োগদান করতে হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ-সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. শিক্ষকদের মর্যাদা ও অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত ইউনেস্কো ও আই.এল.ও-এর সনদ ১৯৬৬ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৫. শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের জন্যে স্বতন্ত্র ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দানকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নিয়মিতভাবে একাডেমিক পরিদর্শন ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. শিক্ষাঙ্গনে দলাদলি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে গভর্নিংবডি-ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার
অনুরূপ নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করতে হবে। ৭. সরকারি কলেজের অনুরূপে বেসরকারি কলেজের জনবল কাঠামো প্রবর্তন করতে হবে এবং বেসরকারি কলেজে ডিগ্রি (অনার্স) ও মাস্টার্স পাঠদানরত শিক্ষকদেরকে এমপিওভুক্ত করতে হবে ইত্যাদি।