শিক্ষাভবন যখন কর্মকর্তার নোট-গাইড বিক্রির দোকান

এনামুল হক প্রিন্স, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

শিক্ষা ভবনকেই এবার নোট-গাইড বই বিক্রির দোকান বানিয়ে ফেলেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। পদের সর্বোচ্চ অপব্যবহার করেই চলছেন পাঁচ বছর আগে সরকারি কলেজ থেকে বদলি হয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে এসে গুরুত্বপূর্ণ পদে জেঁকে বসা বিপুল। 

গত এক সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে দেখা গেছে, অফিস চলাকালীন সময়ে মিনি ট্রাকে করে আসা গণিতের শত শত কপি নোট-গইড অধিদপ্তরের বিভিন্ন কক্ষে রাখা হচ্ছে। লেখক নিজেই, কখনো তার অনুগতরা সরকারি-বেসরকারি কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের গছিয়ে দিচ্ছেন ওইসব নোট-গাইড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে বিপুলের এই পদের অপব্যবহারের তথ্য তুলে ধরছেন।   

      

এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিপুলের লেখা বই বিভিন্ন কলেজে বিক্রির জন্য গছিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কলেজ শিক্ষকদের মাঝে বইটি বিতরণ করা হয়। যার বই বিতরণ করা হয়েছে, তিনি একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। আর যাদেরকে ডেকে বই গছিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যেও রয়েছেন শিক্ষা ক্যাডার। এভাবে ডেকে নিয়ে বই ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে তারা অপমানজনক মনে করছেন। এ নিয়ে দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মেলান্দহে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকরা। 

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির উচ্চতর গণিতের ওই বইটি লিখেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসসহ চার লেখক। প্রকাশ করেছে হাসান বুক হাউস নামের এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজার মো. আশরাফুল আলম এলাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের ডেকে বইটি বিতরণ করেন। 

মেলান্দহ সরকারি কলেজে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত এক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, গতকাল সকালে কলেজে টেলিফোন করে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার গণিতের একজন শিক্ষককে তার কার্যালয়ে যেতে বলেন। আমরা পিয়নকে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বললেন, শিক্ষককে পাঠাতে। শিক্ষক গেলে তাকে বইটি ধরিয়ে দেয়া হয়। সে সময় একাডেমিক সুপারভাইজার বলেন, বইটির লেখক শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত। একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। অর্ডার হয়েছে তার বইটির প্রচারণা চালানোর। 

ওই শিক্ষক আরো বলেন, যদিও এ ধরনের বই নিয়ে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর লোকরা কলেজে ভিড় করেন। কিন্তু এজন্য একজন ক্যাডার কর্মকর্তাকে ডাকিয়ে নেয়া হলো একাডেমিক সুপারভাইজারের কার্যালয়ে। এর এখতিয়ার কি একাডেমিক সুপারভাইজারের আছে?   

      

বই বিতরণের বিষয়টি জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় একাডেমিক সুপারভাইজার মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বই এসেছে। সেগুলো সব কলেজের গণিত প্রভাষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। বইগুলো কে পাঠিয়েছেন জানি না, তবে শিক্ষা অফিসার মহোদয় বইগুলো রিসিভ করেছেন। তিনি বলেছেন, তাই কলেজের শিক্ষকদের ডেকে তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের করা হলে তিনি বলেন, এ বইটি একটি ব্যক্তিগত বিষয়। বেশ কয়েক বছর আগে বইটি লিখেছি। এটি বিতরণ বা প্রচারণা চালাতে অধিদপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু হয়েছে। কেউ আমাকে হেয় করতে এমনটি করতে পারেন। 
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিজ কক্ষে বসে নিজের লেখা নোট-গাইড বিক্রির অভিযোগ উঠেছিলো তৎকালীন মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. এলিয়াছ হোসাইনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর সে বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে সিলেটের বৃন্দাবন সরকারি কলেজে বদলি করা হয়। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ - dainik shiksha একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা - dainik shiksha ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা - dainik shiksha স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা - dainik shiksha স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036361217498779