শিক্ষামন্ত্রী দায় এড়াতে পারেন না

নাহিদ ইকবাল |

অমিতের কালকে পরীক্ষা। পড়তে বসেছে। বই খুলে বসে আছে কিন্তু পড়ায় মনোযোগ নেই। বার বার স্মার্টফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে। বন্ধুরা বলেছিল রাত দশটার মধ্যে প্রশ্ন চলে আসবে। রাত এগারটা কিন্তু এখনো প্রশ্ন আসেনি। কিছুটা উদ্বিগ্ন কিন্তু বিশ্বাসের কাঁটা নড়বড়ে নয়। সে নিশ্চিত আজ রাতে না আসলেও পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ঠিকই প্রশ্নের মতো পবিত্র জিনিসের দর্শন পাবেই।

শিক্ষামন্ত্রী বার বার অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করেছেন জাতির বিবেক শিক্ষকদের দিকে। শিক্ষকদের খুব জোরেশোরে বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে দেখিনি। তারা লজ্জা না পেলেও আমার মতো অনেকের লজ্জা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বরাবর নালিশ করেছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কার্যকর কোনো সহযোগিতা করছে না। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে বা কি ইঙ্গিত দিচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চূড়ান্তভাবে। না হলে কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একটি অংশ কি চোর! প্রশ্নপত্র চুরিতে বার বার দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছে যেখানে ব্যর্থতার পালা ভারী হচ্ছে শিক্ষামন্ত্রীর। শিক্ষামন্ত্রী তো আর দায় এড়াতে পারেন না।

পরীক্ষা আসলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আরেক শ্রেণির ঘুম হারাম হয়ে যায় তারা হলেন পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক। ঘুম হারাম হওয়ার কারণ হচ্ছে এমন এক গুরুদায়িত্ব তারা নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন। যেভাবেই হোক পরীক্ষার আগের রাত্রে প্রশ্ন ছেলে-মেয়েদের সামনে হাজির করতেই হবে। না করলে যে ছেলে-মেয়েদের মুখ দেখানো যাবে না। আবার জিপিএ-৫ না পেলে সমাজে মুখ দেখানো যাবে না। এ দলে রয়েছে সমাজের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সরকারের বড় কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ সমাজের নামি-দামি ব্যক্তিবর্গ। ছেলে-মেয়ে ঠিকমতো স্কুলে যাচ্ছে কি না বা বাড়িতে লেখাপড়া করছে কি না তা কোনো ব্যাপার নয়।

যদি পিতামাতা জড়িত না থাকে তাহলে প্রশ্নপত্র বাণিজ্যের অর্থের জোগান কোথা থেকে আসে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে তো এতো টাকা চিন্তাই করা যায় না। কিন্তু এ রকম কি হওয়ার কথা ছিল। একটি শিশু পৃথিবীতে আগমনের পর বেড়ে উঠে পরিবারের সঙ্গে। পরিবার শিশুর জন্য প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে শিক্ষা পায় নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের। পরিবারই হয়ে উঠে শিশুর প্রাথমিক বিকাশের স্থান। কিন্তু বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিশু পরিবার থেকে শিখছে কি করে প্রশ্ন চুরি করতে হয়। নৈতিকতার ভিত্তি কি পরিবারই দুর্বল করে দিচ্ছে না?

পরিবারের পর শিশুর সামাজিক বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিশুর মানসিক বিকাশে সরাসরি প্রভাব ফেলে শিক্ষকরা। পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চলতে থাকে। পরিবার থেকে যে শিক্ষাগুলো পাওয়া সম্ভব নয় তা সরবরাহ করে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে শিশুদের বিকাশ নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক। সবকিছু অর্থের বিনিময়ে মূল্যায়ন শুরু হওয়ায় মূল্যবোধ জাদুঘরের দিকে ছুটছে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়ার কথা ছিল তা তো দিতে পারছেই না বরং শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধকে আরো অধঃপতনে ত্বরান্বিত করতে অনেকক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। যে অধঃপতনের যাত্রা শুরু হয়েছিল পরিবার থেকে।

সামাজিক বিপ্লব ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ সম্ভব নয়। এ বিপ্লব হচ্ছে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন করে মূল্যবোধ চর্চার বিপ্লব। কোনো একক ব্যক্তি বা সরকারের একার পক্ষে এ অধঃপতন ঠেকানো সম্ভব নয়।

 

লেখক :শিক্ষার্থী,

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032558441162109