নাইজেরিয়ার একটি ইসলামিক স্কুলে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিশু, কিশোর ও পূর্ণবয়স্ক ৫০০ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে। কাদুনার এই স্কুলটিকে বলা হচ্ছে একটি 'নির্যাতন কেন্দ্র' এবং এখান থেকে উদ্ধার পাওয়াদের একজন বিবিসির কাছে তার বর্ণনা করেছেন তার 'দোযখবাসের সমতূল্য' অভিজ্ঞতা। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২৯ বছর বয়স্ক ইসা ইব্রাহিম বলেন, "আপনি যদি প্রার্থনা করেন তারা আপনাকে পেটাবে। আবার আপনি যদি পড়াশোনা করলেও পেটাবে"।
যে ভবনটিতে অভিযান চালিয়ে এদের উদ্ধার করেছে পুলিশ, সেটি একই সাথে ইসলামিক স্কুল ও সংশোধন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
পুলিশ বলছে, এখানে অনেককে পাওয়া যায় শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায়।
কর্তৃপক্ষ বলছে ভিকটিমদের অনেকে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
উত্তর নাইজেরিয়ায় এই ভবনটি পরিদর্শন করেছেন বিবিসির ইসহাক খালিদ। তিনি বলছেন, এ ধরণের আরো প্রতিষ্ঠানেও এই ধরণের ঘটনা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলছেন, দেশটির মুসলিম অধ্যূষিত এই এলাকাটিতে বহু পরিবারই দারিদ্রের কারণে সন্তানকে স্কুলে দিতে পারেনা। অনেকেই বাধ্য হন সন্তানকে এই ধরণের স্কুলে ভর্তি করতে যেগুলোতে মূলত নজরদারির খুব ভালো ব্যবস্থা নেই।
স্কুল ভবনটির সামনে লেখা আছে, 'আহমাদ বিন হামবাল সেন্টার ফর ইসলামিক টিচিং'। কিন্তু যেসব তরুন বা কিশোরদের আচরণগত সমস্যা রয়েছে তাদের সংশোধনকেন্দ্র হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হতো।
পুলিশ বলছে, এটি আসলে স্কুল বা সংশোধন কেন্দ্র- কোন হিসেবেই নিবন্ধিত নয়।
প্রতিষ্ঠানটির সাতজন কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ।
সরকার বলছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।
ইসা ইব্রাহিমের অগ্নিপরীক্ষা
মি. ইব্রাহিম বলছেন, তার পরিবারই দু সপ্তাহ আগে তাকে এই কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলো তার 'আচরণ সংশোধনের' জন্য।
যেদিন পুলিশ এলো, তার আগের দিনও তিনি ওই কেন্দ্র থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি বর্ণনা করেছেন, কেমন নিষ্ঠুর নির্যাতন সেখানে করা হতো। তার হাত বেঁধে তাকে ঝুলানো হয়েছিলো সিলিং এর সাথে।
"আমার অনেক আঘাতের চিহ্ন আছে। শরীরের সব অংশেই আঘাত রয়েছে। এমনকি ঘুমিয়ে পড়লেও তারা বেত দিয়ে পেটাতো ঘুম থেকে জাগানোর জন্য।"
তিনি বলেছেন, চরম ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাকে শুধুমাত্র সাদা ভাত দেয়া হতো খাওয়ার জন্য।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে উদ্ধারপ্রাপ্তদের মধ্যে ৫ বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বেশ অনেক বছর ধরেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর মধ্যে উদ্ধারপ্রাপ্তদের স্বজনেরা আসতে শুরু করেছেন সেখানে। তাদের অনেকের অভিযোগ, স্কুলে গেলে সন্তানদের সাথে দেখা করতে দেয়া হতো না।
"আমরা যদি জানতাম যে স্কুলটিতে এসব হয় তাহলে আমাদের সন্তানদের কখনোই সেখানে দিতাম না"।
কাদুনা রাজ্য সরকার বলছে, তারা এখন সব কোরানিক স্কুলের কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখবে।
"এ ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে," বলছিলেন কাদুনা স্টেট কমিশনার হাফসাত বাবা।
তিনি বলছেন, প্রধান শহরে যে মাত্রায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তাতে করে গ্রাম এলাকায় কি হয় তা তার জানা নেই ।আমাদের সব স্কুল দেখতে হবে। তারা যদি সরকারি আদেশ লংঘন করে তাহলে তা বন্ধ করে দিতে হবে"।কোনো স্কুলে যদি দেখা যায় এ ধরণের নির্যাতনের ব্যবস্থা আছে বা পরিস্থিতি এমন, তাহলে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এজন্য ধর্মীয় ও অন্য নেতাদের কর্তৃপক্ষের সাথে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।