শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোটিপতি পিয়ন গোলাপ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রংপুর মেডিকেল কলেজের পিয়ন গোলাম মোস্তফা (গোলাপ) শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ট্রান্সকিপ্ট, সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করে আজ সে কোটিপতি। বিভাগীয় নগরী রংপুরে তার দৃষ্টিনন্দন বাড়িসহ সে ৬টি প্লটের মালিক। এছাড়াও ৩০ বিঘা জমি ও স্বনামে-বেনামে ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রাখার অভিযোগ উঠেছে। পিয়ন গোলাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোন প্রতিকার না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গোলাপ সম্পর্কে স্ট্যাটাস এখন ভাইরাল হয়ে গেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজে শিক্ষার্থীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন লিয়াকত আলী বাদল। 

রংপুর মেডিকেল কলেজের পিয়ন গোলাম মোস্তফা (গোলাপ) | ছবি : সংগৃহীত

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রংপুর মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট শাখায় গোলাপ পিয়ন হিসেবে কাজ করলেও শিক্ষার্থীদের সব সার্টিফিকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তাদের হেফাজতে থাকে। ওই শাখায় দীনা নামে অফিস সহকারী থাকলেও পিয়ন গোলাপ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুরো স্টুডেন্ট শাখার কার্যালয়টি তার দখলে রেখেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রংপুর মেডিকেল কলেজের ৪৩তম ব্যাচের ইউসুফ হোসেন লেমন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযোগ করেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ইন্টার্ন শুরুর কাগজ ঢাকার থেকে আনার নাম করে প্রতি ছয় মাস অন্তর ইন্টার্ন ডাক্তারদের কাছ থেকে জনপ্রতি দেড় থেকে দু’হাজার টাকা নেন। তার স্ট্যাটাসে ২৫৫ জন শিক্ষার্থী লাইক দিয়ে সমর্থন জানিয়েছে। অপু রায়হান নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানায়, তার কাছে সার্টিফিকেট এনে দেয়ার নাম করে দেড় হাজার টাকা দাবি করলে বিষয়টি তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেনের কাছে অভিযোগ করলে পিয়ন গোলাপ উল্টো তার সামনে অধ্যক্ষকে শাসায়।

নাসরিন সেতু নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযোগ করে কলেজ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে গেলে পিয়ন গোলাপকে একশ’ টাকা দিতে হয়। মোহাম্মদ সুফিয়ান নামে এক শিক্ষার্থী স্ট্যাটাস দিয়ে বলে, এইভাবে টাকা দেয়ার ট্রেডিশন চলতে থাকলে এক সময় তার সঙ্গে কথা বলার জন্য গোলাপ টাকা চেয়ে বসবে। শরিফ হোসেন নামে অপর এক শিক্ষার্থী জানায় তার কাছ থেকে পিয়ন গোলাপ সার্টিফিকেট দেয়ার নাম করে ৫শ’ টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। টাকা চাইলে তাকে উল্টো হুমকি দেয়। তানভীর নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, টাকা নেয়ার সময় গোপনে ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেবার আহ্বান জানায়। জায়ের হক জিম নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানায় রংপুর মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে গোলাপ মানিক মেডিকেল কলেজ নামকরণ করতে। সিরাজুল ইসলাম সুমন জানায় তার বিএমডিসির সার্টিফিকেট আনার কথা গোলাপকে বললে সে চার হাজার টাকা দাবি করে। রবিন ইসলাম নামে শিক্ষার্থী গোলাপকে দুদকে ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানায়।

সৌরভ সাহা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানায়, ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ৫০/৬০ জনের রেজিস্ট্রেশনে বানান ভুল হওয়ায় গোলাপ জনপ্রতি দেড় থেকে দু’হাজার টাকা দাবি করে। মোস্তাফিজার নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে বলে গোলাপ ৩/৪ তলার বিল্ডিং এর মালিক। নুসরাত জাহান রুমা অভিযোগ করে তাদের স্কলারশিপের টাকাতেও টাকা জোর করে কেটে রাখে পিয়ন গোলাপ। এ ধরনের অনেক শিক্ষার্থীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস এখন ভাইরাল (সবগুলো স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট আছে এ প্রতিনিধির কাছে)।

এদিকে সরেজমিন রংপুর মেডিকেল কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা অভিযোগ করে কলেজে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। তাদের রেজিস্ট্রেশন, প্রত্যায়নপত্র, বিএমডিসির সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন জরুরি কাগজপত্র নিতে কলেজে গেলে পিয়ন গোলাপের কাছে যেতেই হবে এবং তার চালচলন বড় অফিসারের মতো। তার সঙ্গী হচ্ছে মানিক নামে এক পিয়ন। তারা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে পিয়ন থেকে এখন কোটিপতি। তার কাছে শিক্ষার্থীরা জিম্মি। স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী হত্যা মামলার আসামিকে তার দেহরক্ষী বানিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, পিয়ন গোলাপের গ্রামের বাড়িতে ৩০ বিঘারও বেশি কিনেছে। রংপুর নগরীতে নামে-বেনামে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি ও ৬টিরও বেশি প্লট আর বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে। কয়েকজন চিকিৎসক জানান, পিয়ন গোলাপ যারাই অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে তাদের কৌশলে ম্যানেজ করে স্টুডেন্ট শাখার কার্যালয় তার কব্জায় রাখে। তাকে মেডিকেল কলেজ থেকে অনত্র বদলি করা না হলে শিক্ষার্থীদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে তারা জানান।

সার্বিক বিষয়ে পিয়ন গোলাপের সঙ্গে কথা বলার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজে গেলে সে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলে, একটি মহল তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তার সম্পদের ব্যাপারে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023789405822754