শিক্ষার্থীদের টাকায়ও কাটবে না অবসর সুবিধা-কল্যাণ সংকট

রুম্মান তূর্য |

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাওয়া যেনো চিরভোগান্তির প্রতিচ্ছবি। বছরের পর বছর অপেক্ষাই যেনো নিয়তি তাদের। তারওপর পদে পদে হতে হয় বিড়ম্বনার শিকার। এমনকি প্রতি মাসে এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) থেকে কেটে নেয়া টাকারও হিসাব পান না শিক্ষকরা। মনে করা হয়েছিলো, শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর করে এ সংকটের অবসান ঘটানো যাবে। তাই ভর্তি ও ফরম পূরণের সময়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা শুরু হয়। সে প্রক্রিয়ারও বছর খানেক পার হতে চললো। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এতোদিনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা বলতে শুরু করেছেন, শিক্ষার্থীদের টাকায়ও দীর্ঘদিন ধরে বেড়ে ওঠা এ সংকট কাটানো যাবে না। এজন্য প্রয়োজন সরকারের থোক বরাদ্দ। 

জানা গেছে, অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট বাবদ ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অনার্সে ভর্তি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে ২২০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু শুধু ষষ্ঠ শ্রেণি ও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৩ কোটি। অন্যান্য শ্রেণি থেকে টাকা আদায় শুরুই করা যায়নি। সব শ্রেণি থেকে টাকা আদায় করা হলেও পৌনে দুশ কোটি টাকার বেশি উঠবে না। ফলে কেবল অবসর সুবিধাখাতেই ঘাটতি থাকবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। 

এদিকে এমপিও থেকে প্রতি মাসে কেটে নেয়া ১০ শতাংশ টাকা ও সে টাকার হিসাব না পেয়েও অসন্তুষ্ট শিক্ষকরা। 

জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে একাদশে ভর্তির সময় থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ১০০ টাকা করে তোলা শুরু হয়। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলে ভর্তির সময়ও তোলা হয়েছে ১০০ টাকা করে। সূত্র বলছে, ষষ্ঠ থেকে মাস্টার্স শ্রেণির ১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫২২ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তির সময় ১০০ টাকা করে নিয়ে বছরে ১৭৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা যোগাড়ের পরিকল্পনা ছিলো। এর বাইরে এসএসসি, এইচএসসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স পর্যায়ে ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ ৪৫ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। 

এছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও থেকে প্রতিমাসে ৩২ কোটি টাকার বেশি কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ও প্রায় ৪৯ কোটি টাকা অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য কেটে রাখা হয়। আর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের এমপিও থেকে প্রতিমাসে এ দুই খাতের জন্য কেটে রাখা হয় ৩২ কোটি টাকার বেশি। প্রতি মাসে শিক্ষকরা ১১৩ কোটি টাকা নিজেদের এমপিও থেকে এ দুই খাতে দেন। সে হিসেবে বছরে এ দুই খাতে শিক্ষকরা দেন ১ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। সময়মতো টাকা না পাওয়ায় তাই শিক্ষকের ভেতরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মূলত অর্থ সংকটের কারণে ঠিক সময় শিক্ষকদের টাকা বুঝিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এ সংকট কাটাতে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু করেছিলাম। যে টাকা এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে আছে। তবে তাতেও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আশা করছি, সরকারের পক্ষ থেকে টাকা বরাদ্দ দেয়া হলে এ সংকট কেটে যাবে। 

মহাপরিচালক বলেন, পুরনো শিক্ষকরা আগে একটা সময় পর্যন্ত চাঁদা না দিলেও অবসরের পর তাদের পুরো সুবিধা দিতে হচ্ছে। ফলে টাকার সংকট থেকে যাচ্ছে। আগের শিক্ষকরা অবসরে চলে গেলে এ সংকট আর থাকবে না বলে আশা করছি।

অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শরীফ সাদী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, অবসর সুবিধা খাতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ টাকা তোলার পরও ৪০০ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি। পরিকল্পনা ছিলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তোলা যাবে ২২০ কোটি টাকার মতো। তবে বাস্তবতা হলো, শুধু ষষ্ঠ ও একাদশে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসেছে ১৩ কোটি টাকার মতো। তাই সংকট কাটাতে প্রয়োজন সরকারি থোক বরাদ্দ। আমরা আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংকট কাটাতে পদক্ষেপ নেবেন।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028820037841797