'শিক্ষার্থীদের থামালেন, শিক্ষকরা না গেলে ক্লাস কীভাবে হবে'

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এবং পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। কোটার আন্দোলনে দেশের প্রায় সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হলেও পেনশনের আন্দোলন মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের।  শনিবার (১৩ জুলাই) বিবিসি বাংলা অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন সৌমিত্র শুভ্র। 

গত বুধবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা দেয় আপিল বিভাগ। 

এ সংক্রান্ত আদেশের সাথে তিনটি পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাও দেয়া হয় আদালতের পক্ষ থেকে। যার প্রথমটিতে, প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হয়। আদালতের আদেশের পর, সরকারের দু'জন মন্ত্রীও আন্দোলনকারীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তবে, শিক্ষার্থীরা স্থায়ী সমাধানের দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে।

আপিল বিভাগের নির্দেশনায়, স্ব স্ব ছাত্র-ছাত্রীদের ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে উপাচার্য বা প্রক্টরদের। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদালতের এই নির্দেশনাটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠিয়েছে। কিন্তু, আন্দোলন ইস্যুগুলোর সমাধান না হলে, ক্লাসে ফেরার আহ্বান বা নির্দেশনা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

পেনশন ইস্যুতে আন্দোলনের কী অবস্থা?
সর্বজনীন পেনশনের 'প্রত্যয়' স্কিম চালুর পর থেকেই এটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। মার্চে প্রজ্ঞাপন জারির পরপর এর বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

তারপর থেকে ধারবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

গত মাসের শেষ সপ্তাহে আন্দোলন চূড়ান্ত মাত্রা পায় যখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা তিন দিন 'অর্ধদিবস কর্মবিরতি' পালন করেন। 'প্রত্যয়' স্কিম বাতিলে সেসময় সরকারকে ৩০শে জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন শিক্ষকরা।

কোনো সিদ্ধান্ত না আসায়, পহেলা জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে টানা কর্মবিরতি শুরু করেন তারা।

কিন্তু, দুই সপ্তাহ হতে চললেও এখনো পর্যন্ত সরকারের সাথে কোনাে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া।

অধ্যাপক ভূঁইয়া বলেন, "আমাদের সাথে সরকার যোগাযোগ করেছে। শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে আনঅফিশিয়ালি। তবে অফিশিয়ালি এখনো কোনো কথা হয় নাই।"

দুয়েকদিনের মধ্যেই সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে বসতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।

দুই সপ্তাহ ধরে সমস্ত পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলছেন, "দ্রুতগতিতে এই বিষয়গুলোর সমাধান হওয়া উচিত।"

 তিনি বলেন, "কোটা আন্দোলন তো অনেকটা সমাধানের পথে। শিক্ষকদের বিষয়টাও সমাধান হয়ে গেলে আমরা সহজে ক্লাসে ফিরে যেতে পারি।"

তবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর মনে করছেন, "ছাত্রদের আন্দোলন তাড়াতাড়ি শেষ হলেও, শিক্ষকদের আন্দোলন এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে না।"

"বাংলাদেশে কোনো জিনিসের সমাধান ওভারনাইট হয় না। সরকারের সংবেদনশীলতা থাকলে এতো লম্বা সময় লাগার কথা না," বলেন তিনি।

'ছাত্রদের থামালেন, শিক্ষকরা না গেলে কীভাবে হবে?'
ক্লাসে যাওয়ার নির্দেশনা এখনো হাতে পাননি বলে জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বলেন, হাতে পেলে নিজেদের মধ্যে কথা বলবেন।

ইউজিসির তরফে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সেই নির্দেশনা মানবে কি না তা রোববার নাগাদ জানা যাবে।

তবে, "আপাতত এই সমস্যাগুলো সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে না" বলেই মনে করেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর।

"আর, উপাচার্য বা প্রক্টরের পক্ষে ছাত্রদেরকে ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব," যোগ করেন তিনি।

জানান, ঢাকার বাইরে অনেক ক্যাম্পাসে ছাত্ররাও নেই।

শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত না হলে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রচেষ্টা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সেই প্রশ্ন রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মি. ভূঁইয়া।

বলেন, "ওরা ক্লাস বর্জন করছে, আমরাও তো ক্লাসে যাচ্ছি না। ছাত্রদের আপনারা থামাইলেন, কিন্তু শিক্ষকরা ক্লাসে না গেলে কীভাবে হবে?"

সরকার কী করছে?
টানা কর্মবিরতির তিন দিনের মাথায় শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে চান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তেসরা জুলাই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান পরদিন দেখা করার কথা।

কিন্তু, সেই বৈঠকটি বাতিল হয়।

পেনশন ইস্যুতে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান পেনশন কর্তৃপক্ষের একটি প্রেস রিলিজ পাঠান।

গত দোসরা জুলাই প্রকাশিত ওই প্রেস রিলিজে 'প্রত্যয়' স্কিম নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার ব্যাপারে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

তাতে, ৩০শে জুন পর্যন্ত বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার সঙ্গে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের তুলনা করা হয়েছে।

দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় পেনশনাররা কীভাবে লাভবান হবেন।

‘প্রত্যয়’ স্কিমের সঙ্গে আগের পেনশনের পাঁচটি পার্থক্য
গত পহেলা জুলাই থেকে স্বায়ত্তশাসিত, স্ব-শাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীরা অবসরে গেলে প্রত্যয় স্কিম অনুযায়ী পেনশন পাবেন। যে পাঁচটি মৌলিক পার্থক্যের কারণে নতুন পেনশন ব্যবস্থাটি আলোচিত ও বিতর্কিত হচ্ছে সেগুলো হলো:

বেতন থেকে জমা

আগের নিয়মে যারা পেনশন পাচ্ছেন তাদের বেতন থেকে এর জন্য কোনো টাকা কাটা হয় না।

প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা পাঁচ হাজার টাকা (এর মধ্যে যেটি সর্বনিম্ন হবে) জমা রাখতে হবে।

এককালীন টাকা

আগের নিয়মে মোট পেনশনের অর্ধেক টাকা এককালীন বা থোক হিসেবে দেয়া হয়। আর মাসে মাসে ভাতা পান পেনশনাররা।

প্রত্যয় পেনশনে রিটায়ার করার পর কোনো এককালীন টাকা দেয়া হবে না। পুরো অর্থ একসাথে তোলার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। মাসিক ভিত্তিতে টাকা দেয়া হবে।

ইনক্রিমেন্ট

পূর্বের নিয়মে চাকরিতে থাকা সরকারি কর্মচারীর মতো পেনশনারও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন।

প্রত্যয়সহ সর্বজনীন পেনশনের কোনো স্কিমেই ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা নেই।

সরকার কোনো টাকা দেবে?

বাংলাদেশে বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খরচ হয় সরকারি চাকরিজীবিদের পেনশনের পেছনে। চলতি অর্থবছরে যার অঙ্ক প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। প্রত্যয় স্কিমে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো টাকা দেয়া হবে না।

চাকরির সময়সীমা

একজন সরকারি চাকরিজীবী সর্বনিম্ন পাঁচ বছর চাকরি করলে পেনশনের যোগ্য বলে বিবেচিত হন।

সর্বজনীন স্কিমগুলোতে পুরো সুবিধা পেতে অন্তত ১০ বছর টাকা জমা করতে হবে। পেনশনের বয়সে পৌঁছানোর আগে কোনো টাকা পাবেন না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষার নির্দেশনা - dainik shiksha ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষার নির্দেশনা রাজশাহী কলেজে নতুন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha রাজশাহী কলেজে নতুন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ রাষ্ট্রের কাছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা চাইনি : হাসনাত - dainik shiksha রাষ্ট্রের কাছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা চাইনি : হাসনাত ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৬৩১, আহত ১৯ হাজার - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৬৩১, আহত ১৯ হাজার সৃজনশীলেই হবে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিকের পরীক্ষা - dainik shiksha সৃজনশীলেই হবে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিকের পরীক্ষা বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব কর্মসূচি - dainik shiksha বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব কর্মসূচি একাদশের রেজিস্ট্রেশন শুরু ১৫ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha একাদশের রেজিস্ট্রেশন শুরু ১৫ সেপ্টেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052611827850342