পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজের বাসার বিভিন্ন কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজের বাসা, বাথরুম ও বাগান পরিষ্কার করানোর অভিযোগ গত ৫ আগস্ট লিখিত আকারে জেলা ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে জমা দেন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক। এরপর উপজেলা প্রশাসন থেকে অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিরও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৬ আগস্ট বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ (ম্যানেজিং কমিটি) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভাষ্য এবং লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন ২০০৯ সালে তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। এরপর থেকেই পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজের বাসা, বাথরুম, বাগান ও পানির ট্যাংকি পরিষ্কারের কাজ করান শিক্ষক ফাতেমা। এ ছাড়া স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ে দেরি করে আসা, শিক্ষার্থীদের কাছে বাধ্যতামূলক গাইড বই বিক্রি, পুরনো বই ফেরত নিয়ে বিক্রি করাসহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় অভিভাবকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আফছানা বেগম নামে এক অভিভাবক। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক ফাতেমার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রাইভেট না পড়লে এবং বাসার বাথরুম-পানির ট্যাংকি পরিষ্কার, রুম ঝাড়ু, বাগান পরিচর্যা ও ঘর না মুছলে ফেল করানোর ভয় দেখান প্রধান শিক্ষক ফাতেমা। গাইড বই না কিনলে তিনি বকাঝকা করেন। তাই অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায় না।
আবু কালাম প্রধানিয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষক ফাতেমা পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ছেলেকে দিয়ে জোর করে বাথরুম, ঘর পরিষ্কার করিয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি এমন হয়, তাহলে ছেলে কী শিখবে! এ ধরনের আচরণের জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম জাহাঙ্গীর আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ সরকার বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আমার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খারাপ আচরণ করেন। তার আচরণে সবাই বিরক্ত। তার কারণে স্কুলের শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ২০০৯ সালে ফাতেমা খাতুন স্কুলের দায়িত্বে আসার পর থেকে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটিসহ এলাকার কোনো মানুষ তাকে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান না।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য কিছু লোক আমার বিরোধিতা করছে। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ. ছোবাহান মুনশি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আর বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’