করোনা মহামারীর এই পরিস্থিতে বাড়ি যাওয়ার সুযোগে বিনা নোটিশে শিক্ষার্থীদের উৎখাত করেছেন ঢাকার বাড়িওয়ালারা। ধানমণ্ডিতে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট, ল্যাপটপসহ সব জিনিস ভাগাড়ে ফেলে দেয়ার অভিযোগ এসেছে এক বাড়িওলার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩০ শিক্ষার্থীকে হোস্টেল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। গ্যারেজে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মালামাল।
ঢাকা কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব। মাথা গোঁজার ঠাঁইতো হারিয়েছেনই, ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে শিক্ষাজীবনের অর্জন সনদগুলোও। কাঁদতে কাঁদতে সজীব বলছিলেন, 'ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালারা এমন অমানুষ হতে পারে আমার জানা ছিল না।'
রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার বাড়িওয়ালা মজিবুর রহমান পুরো ভাড়া দিতে না পারায় ৯ শিক্ষার্থীকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন বিনা নোটিশে। শুধু তাই নয়, তাদের জরুরি কাগজপত্রসহ সব জিনিস ফেলে দিয়েছেন ভাগাড়ে।
একই দশা এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩০ শিক্ষার্থীর। দুই মাসের ভাড়া বকেয়া হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সব জিনিসপত্র ফেলে দেন গ্যারেজে। খবর পেয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসেন ছাত্ররা।
এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমার জেএসসির সার্টিফিকেট, এসএসসির সার্টিফিকেট একটা ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট নেই।'
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'ডেক্সটপ, ল্যাপটপ অনেকের ট্রাঙ্কের ভেতর গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ছিল।'
আরেকজন বলেন, 'প্রথমমাসে উনি আমাদের কাছে ভাড়া চায়, কিন্তু করোনার কারণে আমরা দিতে পারিনি। এরপর আর উনি যোগাযোগ করেনি আমাদের সাথে। নিজেই আমাদের জিনিসপত্র বের করে দিছে বিনা নোটিশে।'
আরেকজন বলেন, 'আমাদের যে অ্যাডভান্সড টাকা ছিল সেই টাকা রেখে নামায় দিছে বাড়িওয়ালা, এখন অন্তত সার্টিফিকেটগুলো খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি।'
এ ঘটনায় হোস্টেল পরিচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ বরদাশত করা হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন তারা।
নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান বলেন, 'শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দেওয়ার পর সেটা আমরা গ্রহণ করেছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।'
করোনাভাইরাসের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে বহু মানুষ কর্মহীন। কাজ হারিয়ে ভাড়া দেয়ার সামর্থ্য খুইয়ে বহু মানুষ ফিরছেন এক সময়ে ফেলে আসা গ্রাম বা মফস্বলের ভিটেমাটিতে। একই পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদেরও। ঢাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করে জীবন চালিয়ে নেয়া অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর জীবন আজ থমকে গেছে। করোনায় টিউশনি হারিয়ে বাসা, মেস বা হোস্টেলের ভাড়া দেয়াতো দূরের কথা, জীবন ও লেখাপড়ার খরচ চলিয়ে নেয়াই তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনার এই দুর্যোগে মাথার ওপর ছাদ হারিয়ে দিশেহারা এসব শিক্ষার্থীরা। তারা জানেননা কবে এসব সমস্যার সমাধান হবে। অথবা আদৌ শিক্ষা জীবন নির্বিঘ্ন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কী না।