শিক্ষার্থীদের সড়ক আন্দোলন:সেই ৯ দাবির ৭টিই অপূর্ণ

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে বাসচাপায় হত্যার ঘটনায় টানা ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠলে তাদের ৯ দফা দাবি মানার আশ্বাস দেয় সরকার, ঘরে ফেরে শিক্ষার্থীরা। গত প্রায় আট মাসে শিক্ষার্থীদের ৯ দাবির মধ্যে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ জাতীয় সংসদে অনুমোদন হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। সাবেক নৌমন্ত্রী ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। বাকি দাবিগুলো এখনো প্রক্রিয়াধীন। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হলেও তাদের সমন্বয়হীনতা ও ধারাবাহিক কর্মসূচির অভাবে দাবিগুলোর জোর যেন ফিকে হয়ে গেছে। 

শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি ছিল বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।

সব শেষ তথ্যানুসারে, অভিযুক্তদের বিচার আদালতে চলছে। সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চালনায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুমোদন করা হয়েছে গত ১৯ সেপ্টেম্বর। দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক, সহকারী, মালিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সরকার তাত্ক্ষণিক জাবালে নূর পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করলেও তা দৃশ্যত কার্যকর হয়নি।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএসে ফুট ওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে আন্ডারপাস বা ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটির পুরো ফল পেতেও আরো সময় লাগবে।

শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল প্রতিটি সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় গতিরোধক স্থাপন করা। এ দাবির সম্পূরক হিসেবে সব স্কুলের সামনে গতিরোধক নির্মাণের পাশাপাশি বিশেষ প্ল্যাকার্ড যুক্ত বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে সড়ক বিভাগ দেশের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে অবকাঠামো উপযোগী করতে শুরু করেছে। যেমন ঢাকা-আরিচা সড়কে দুর্ঘটনা আগের চেয়ে কমেছে। সড়কে বাঁক কমানো হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের এ দাবির পর প্রধানমন্ত্রী নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিমের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই ব্যয়ভারও বহন করছে সরকার।

শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে, এ দাবি পূরণ হয়নি। দাবিটি বাস্তবায়নে সরকার একমত হলেও সব স্থানে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষার্থীদের এই দাবিও পুরো বাস্তবায়ন হয়নি। বরং ঢাকার প্রধান সড়কে পরিচয়পত্র দেখিয়ে বাসে ওঠার পরও হাফ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বাসের চালকসহ অন্য কর্মী ও মালিকরা দাবির বিরোধিতা করছেন। তবে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজকে পাঁচটি বাস দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম দাবি ছিল ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে বারবার বৈঠক হয়েছে। তবে রাস্তায় ফিটনেসহীন বাস চলছে। লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিআরটিএ ও ঢাকা মহানগর পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সংস্থা দুটো বারবার অভিযান যদিও চালাচ্ছে তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আরেকটি দাবি ছিল, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী না নেওয়ার পক্ষে একাত্মতা পোষণ করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, সিটিং সার্ভিসের ক্ষেত্রে এটি আইনসম্মতও নয়। পুলিশকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তবে বাস্তবে তার বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না।

মামলার অবস্থা : রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা এবং কয়েকজনকে আহত করার ঘটনায় মামলায় জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের মালিক, চালক ও হেলপারদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ শেষ হয়নি, সাক্ষ্যগ্রহণ অবশ্য প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দেওয়া হয়। ২৫ অক্টোবর আদালত অভিযোগ গঠন করেন। এক মাসের মধ্যে ৪১ জন সাক্ষীর ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ডিসেম্বরে আদালতে ছুটি থাকায় এক মাস বিচারকাজ মুলতবি করা হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচারকাজ চলছে। বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারকাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে অল্প দিনের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তির দিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই আবার ধীরগতি চলে আসে বিচারকাজে। জানা যায়, অন্যান্য মামলার অতিরিক্ত চাপে থাকায় কিছুটা ধীরগতিতে চলে যায় মামলা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্য একটি বাসের চালক মো. সোহাগ আলী ও হেলপার মো. রিপন হোসেনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ওই আদালতের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল বলেন, এই মামলার বিচারকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন আদালত। গত বছর ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর প্রায় প্রতিদিনই মামলা শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ। আশা করা যায়, দ্রুত শেষ হবে বিচার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036919116973877