বিদ্যমান বাস্তবতা সাক্ষ্য দেয়, কোনো কোনো মহল সাধারণ শিক্ষার্থীদের আড় চোখে দেখছে। প্রায়ই বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সুযোগ পেলে গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করে না তারা। সরকারিভাবে স্টুডেন্ট পাস তথা শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার নিয়ম করে দেওয়ার পরও রাজধানীতে গণপরিবহন তা না মেনে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ায়। কোনো নারী শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট পাসের কথা বললে অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্নিষ্টরা তা মানে না। উল্টো তাদের উদ্দেশ করে অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলে। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, স্টুডেন্ট পাসের কথা বলায় শিক্ষার্থীদের পরিবহন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া, শ্রমিকদের জড়ো করে হামলা চালিয়ে তাদের রক্তাক্ত করার ঘটনাও এর মধ্যে কম ঘটেনি। শুধু যে পরিবহন শ্রমিকরা এমন করছে, তা নয়। কোনো কোনো ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত আচরণ করছেন। ১৮ এপ্রিল রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেটের দোকান কর্মচারীরা হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে বাধে সংঘর্ষ।
২১ এপ্রিল সমকালের সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুর রহমান তপনের 'নিউমার্কেটের সংঘর্ষ এতদূর গড়াল কেন' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। লেখক যথার্থই মন্তব্য করেছেন- কেন এই বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ সহিংসতায় রূপ নিল? আমাদেরও প্রশ- প্রশাসন কেন নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল? কেন একজন নিরীহ পথচারী ও দোকান কর্মচারীকে অকালে জীবন দিতে হলো? এ দায় কীভাবে এড়াবে পুলিশ? সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আর ব্যবসায়ীরা এক হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। ইটপাটকেল, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে। ১৯ এপ্রিল সকাল থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ। মার্কেট বন্ধ রাখলেও ছাত্রদের ওপর হামলা বন্ধ রাখেনি মার্কেটের দোকানি-কর্মচারীরা। এ সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশ, শিক্ষার্থীসহ দু'শতাধিক আহত হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। অভিযোগ আছে, সংঘর্ষ থামাতে এসে ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত হয়েছেন ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষক। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটেছে।
শুধু নিউমার্কেট নয়, রাজধানীর অনেক এলাকার কতিপয় ব্যবসায়ী-কর্মচারী প্রায়ই অশালীন ব্যবহার করেন ক্রেতাদের সঙ্গে। এসব ব্যাপারে ক্রেতাদের নানা রকম অভিযোগ আছে। সুযোগ পেলেই নারীকে উত্ত্যক্ত করা, পণ্য কেনার জন্য জোরজবরদস্তি, এমনকি না নিতে
চাইলে কর্মচারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ক্রেতাদের নাজেহাল করার অভিযোগও আছে। শিক্ষার্থীরা এমন অসংগতিপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের ওপর হামলে পড়ে ওই বলবানরা। অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে রাখার বিষয়টি তো প্রশাসন-পথচারী কারোরই অজানা নয়। ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে নিউমার্কেট এলাকায় সহিংসতার পেছনের রহস্যের সন্ধান জরুরি।লেখক : আব্দুল্লাহ আলম নুর, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।