শিক্ষার অংশ হোক সাঁতার

আসিফ |

নদীমাতৃক আমাদের এই দেশ। নগরকেন্দ্রিক জীবনে নদী-খাল একের পর এক উধাও হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্রভাবে ছড়িয়ে আছে নানা ধরনের জলাধার। তাই এই জনপদে অনেক বাড়ির আশপাশে পুকুর কিংবা ডোবা থাকা খুবই স্বাভাবিক। আর খাল-বিল তো রয়েছেই। তাই তো পা বাড়ালেই কোনো জলাধার খুঁজতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না আমাদের। উপরন্তু এমন কোনো বছর নেই, যে বছর বন্যা আঘাত হানে না বাংলাদেশে। বন্যার পানিও নিচু এলাকায় জমে থাকে কয়েক সপ্তাহ, কখনো-বা মাসব্যাপী। পানির এই সহজ লভ্যতার কারণেই সাঁতার না জানা শত শত শিশু প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায় বাংলাদেশে। সবসময় সাঁতার না জানার কারণেই ব্যাপারটি ঘটে তা নয়, কখনও শিশুদের দেখে না রাখার কারণে, কখনও আশপাশের জলা-ডোবা সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার কারণেও ডুবে মরার নজির রয়েছে। সম্প্রতি ফেনীর দাগনভুঞায় চার বছরের যমজ ভাইবোনের অভিভাবকদের অসতর্কতার কারণে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও শেরপুরের নকলা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও চট্টগ্রামের রাউজানে গত চার দিনে ৮-৯ জনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে পড়ে।

সাঁতার না জানার কারণে এভাবে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৪৮ ছেলেমেয়ে প্রাণ হারাচ্ছে বলে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। সে হিসাবে প্রতি বছর ১৮ বছরের নিচে মারা যায় ১৮ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে। ২০০৫ সাল থেকে এই হিসাবটা করা হয়েছে। এটাই বিশ্বের সর্বোচ্চ। 

বছরখানেক আগে চীনের অন্যতম নামি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীদের বলা হয়েছে, স্নাতক ডিগ্রি পেতে হলে তাদের অবশ্যই আগে সাঁতার শিখতে হবে। উল্লেখ্য, শিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় প্রাচ্যের হার্ভার্ড। তাদের গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির সঙ্গে সাঁতার শেখাকে এভাবে যুক্ত করার সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলেছেন, যে দেশ এখন খরা মোকাবেলা করছে, নদী বা সাগর নেই, সেখানে এ পদক্ষেপের যৌক্তিকতা কী? সে ক্ষেত্রে নদী-নালা, খালা-বিল, পুকুর-ডোবা ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশে এ রকম পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। তার ওপর সাঁতার একটি জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা, শরীর চর্চার অংশ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। স্কুল যদি পুরো জীবনকে এমনভাবে গড়ে দেওয়ার অংশ হয়ে থাকে, যাতে সে সমাজের সঙ্গে সুস্থতা বজায় রেখে চলতে পারে, তাহলে শিক্ষায় মনের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে জোর দেওয়া আবশ্যক। 

যদিও বছরখানেক আগে ডুবে মরার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার দেশের সব স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের জন্য সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করতে বলেছে। তা কার্যকর হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে তেমন নজরদারি নেই; নেই কোনো কার্যক্রম। বর্তমানে সাঁতার শেখার ব্যাপারে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রথমত, যারা শহরে বসবাস করেন, তাদের পক্ষে সন্তানদের সাঁতার শেখানোর মতো কোনো সুযোগ নেই। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরে যেখানে প্রায় চার হাজার পুকুর-দীঘি ছিল, সেখানে এখন শ'খানেকে নেমে এসেছে- ঢাকায় তা আরও কম। প্রয়োজনীয় সুইমিংপুল না থাকা এবং যা আছে তাতে খরচের কথা বিবেচনা করে সবার পক্ষে সাঁতার শেখানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলেও আজ দ্রুত থেকে দ্রুততরভাবে পুকুর-দীঘির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আবার আমাদের নদীগুলোও দিন দিন মরে যাচ্ছে; দখল-দূষণের কারণে অনেক নদীর অবস্থা সঙ্গিন। তবে প্রত্যেক স্কুলে সাঁতারের ব্যাপারে সরকারের এ রকম পরিকল্পনা জোরদার করা হলে চারিপার্শ্বের হাজামজা পুকুরগুলো আবার জীবন্ত উঠতে পারে। 

শুধু সাঁতার না জানার কারণেই যদি ৪৩ শতাংশ শিশু মৃত্যুবরণ করে থাকে, তবে বিষয়টি আসলেই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি অভিভাবক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও একটি ভূমিকা পালন করতে পারে। স্কুল-কলেজের পরিকল্পনায় জলাধার বা পুকুরের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটা পরিবেশবান্ধব হবে, খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়বে। ফলে বিপুল সংখ্যক সম্ভাবনাময় জীবন ক্ষয় থেকে আমরা বেঁচে যাব।

সূত্র: সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002263069152832