শিক্ষার গুণগত মান কি বাড়ছে?

আবু হুরাইরা আতিক |

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। বাঙালি সাহিত্যিক বলেন, কোনো জাতিকে যদি তুমি সমূলে ধ্বংস করতে চাও তাহলে ঐ জাতির বইগুলো পুড়ে ফেল আর পণ্ডিতকে হত্যা কর তোমার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটুকু উন্নত ও কার্যকর তা দু-একটি উদাহরণ দিলেই যথেষ্ট হবে। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া একজন শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হলো, আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি এর ইংরেজি কি? শিক্ষার্থীর জবাব ছিল এই রকম আই অ্যাম জিপিএ ফাইভ। এদেশের শিক্ষানীতি ও পদ্ধতি অনেকটাই শাসকদের মনগড়া।

আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যখন বিএ অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করা কোনো শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি তো নয়ই কেরানীর চাকরিতেও ঘুষ ছাড়া চাকরি পায় না। প্রথমেই চাকরির কথা বলে নিলাম। কারণ আমাদের মানসিকতাই এমন হয়ে গেছে যে যেকোনো মূল্যেই আমাকে চাকরি পেতেই হবে। আমরা বইয়ের পাতায় যতই পড়ি না কেন যে শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের আচরণ ও বুদ্ধি বৃত্তিক গুণাবলীর কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটা।

কিন্তু বাস্তবতায় এর সংজ্ঞা হয়ে দাঁড়িয়েছে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো চাকরি পাওয়ার যোগ্য হওয়া। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তাত্ত্বিকভাবে চাচ্ছে; মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে আর সমাজ চাচ্ছে দু-মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে। যার ফলে একটি অপরটির সহায়ক না হয়ে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিকে যদি চাকরির উপযোগী করেই গড়ে তুলতে হয় তবে কারিগরি শিক্ষার দিকে জোর দিলেই হয়।

কেননা বিমান বাহিনীর অফিসার হতে গেলে এক কাপ চায়ে কত ছটাক লবণ লাগে ভাইভা বোর্ডে তা জানার কোনো দরকার আছে? একইভাবে চাকরির ক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষার যদি এতই প্রয়োজন মনে করেন তাহলে এটাকে কোর্সের অন্তর্ভুক্ত করেন না কেন? এবার একটু উচ্চ শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া যাক। বাংলাদেশের স্বীকৃত উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে আদৌ উচ্চ হয় কি-না তা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে গেলেই বোঝা যায়।

বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বলা হয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকালে ৮টায় সিট নেবার জন্য ৭টা থেকে লাইন ধরে থাকতে হয়। এ অবস্থা দেখে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক কিংবা পর্যটকেরা বিস্ময় প্রকাশ করবে এই ভেবে যে শিক্ষার জন্য মানুষের এত আগ্রহ! কিন্তু দূরাশার বাণী হচ্ছে এই শিক্ষার্থী বা পাঠকেরা কেবলমাত্র এমপি থ্রি আর জব সলিউশন নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করার জন্য এত ভিড় জমায়, বিশেষ গবেষণার জন্য নয়। যে শিক্ষার্থী ৫ বছর আইন শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করে আইন নিয়ে গবেষণা পরিমার্জন, সংশোধন ও পরিবর্তন আনার কথা ভাববেন সেই শিক্ষার্থী এমপি থ্রি বইয়ের কি সংশোধন আনা যায় তা নিয়ে গবেষণা করে।

সমাজবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সমাজের প্রচলিত ও গতানুগতিক সমস্যার সমাধান না খুঁজে হরহামেশাই জব সলিউশনের রিভাইজ করে থাকে এবং কোথায় ম্যাথের সলিউশনের আনসার ভুল আছে তা নিয়ে জরিপ করে। সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ের শিক্ষার্থীরাও এই একই পন্থা অবলম্বন করে। সুতরাং এই উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নূন্যতম শিক্ষাও হচ্ছে বলে মনে হয় না। শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হতে আমরা দিন দিন সরে যাচ্ছি।

একটা সময় ছিল যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের কলাম পড়ার জন্য আলবার্ট আইনস্টাইন অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতো কিন্তু বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষকের বই আর কলাম বের হয়। দুঃখের বিষয় হলো এসব লেখা রাস্তার ধারে ধারে পড়ে থাকে কেউ তুলেও দেখে না। আমরা হয়ত সবাই সত্যেন সেন, জগদীশ চন্দ্র বসুর মত বিজ্ঞানী হয়ে আইনস্টাইনকে কলাম উপহার দিতে পারবো না, কিন্তু কমপক্ষে দাসত্বের বন্ধন হতে মুক্ত হতে পারবো। শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে যে রকম দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষাবিদ ও দার্শনিকের প্রয়োজন, রাজনীতি ও দলীয়করণের কারণে আমরা তা পাচ্ছি না।

লেখক:শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: ইওেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049829483032227